parbattanews

কক্সবাজারে ড্রাগ লাইসেন্স নেই ১১০ ফার্মেসির

কক্সবাজার জেলায় ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির ছড়াছড়ি। লাইসেন্সধারী ৩১৬৬টি ফার্মেসির বেশিরভাগে ফার্মাসিস্ট নেই। ওষুধবিদ্যায় ন্যূনতম পড়ালেখা নেই, এমন লোকও ফার্মেসি দিয়ে বসে আছে। যেখানে সেখানে গড়ে ওঠছে ওষুধের দোকান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুব ভয়াবহ। ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে মানহীন কোম্পানীর যত্তসব ওষুধ। সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিনামূল্যের ওষুধসামগ্রী বিক্রি করছে অসাধুরা। কিছু ওষুধের দোকানে অধিক দাম হাতিয়ে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের।

কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়ক ও পানবাজার সড়কে গেলে অভিযোগের কিছুটা সত্যতা মিলবে। বিশেষ করে, শহরের বাইরে কিংবা গ্রামাঞ্চলের ফার্মেসিগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। অধিকাংশের লাইসেন্স নেই। যে মাত্রায় ওষুধ রাখার নির্দেশনা, তা মানা হয়না।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সাধারণত অন্য যেকোন পণ্যের মতো ওষুধে দামাদামি নেই, তাই ইচ্ছে মতো দাম নেয়। নকল, ভেজাল, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা হয় গ্রামের ফার্মেসিতে। প্যাকেটের লেভেল পাল্টিয়ে বেশি দামে ওষুধ বেছছে কিছু দোকানি। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ বিক্রি করছে শহরের চিহ্নিত কয়েকটি ফার্মেসি। তাদের গোডাউন বাসাবাড়ি কেন্দ্রিক।

ঔষধ প্রশাসন কক্সবাজার অফিসের তথ্য মতে, জেলায় লাইসেন্সধারী ফার্মেসির সংখ্যা ৩১৬৬ টি। ড্রাগ লাইসেন্স নেই ১১০টি ফার্মেসির। লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন ৭০টি ফার্মেসি। ঔষধ প্রশাসনের শর্তভঙ্গ, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রিসহ নানা অভিযোগে বিগত অর্থ বছরে ১২টি ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন না করা, অস্তিত্বহীন দোকান (ঠিকানা গরমিল) সহ বেশ কিছু কারণে বাতিল হওয়ার পথে ৪৩টি ফার্মেসির লাইসেন্স।

এছাড়া ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি ও নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে ৩২টি ফার্মেসিকে ৪,৯৮,০০০ টাকা জরিমানা করে। ড্রাগ লাইসেন্স না রাখায় চারটি ফার্মেসির বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৯টি দোকান। ২৭টির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

তথ্যমতে, জুন মাসে নতুন ড্রাগ লাইসেন্স আবেদন, ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও বিলম্ব ফি বাবদ ১,৭৪,২৫০ টাকা এবং ভ্যাট বাবদ ২৬,২২৮ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে ২টি জনসচেতনতামূলক সভা হয়।

বিগত অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ২০ লক্ষ ১৪ হাজার ৩২০ টাকা। ভ্যাট আদায় ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৩৭৬ টাকা।

বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি (বিসিডিএস) কক্সবাজার জেলা সভাপতি আরিফ উল মওলা বলেন, ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া কেউ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। ব্যবসা করলে আইন মেনে চলতে হবে। যাদের ফার্মাসিস্ট, ট্রেড লাইসেন্স, ও ড্রাগ লাইসেন্স আছে, তাদেরকে সমিতির সদস্য করা হয়। আইন বহির্ভূত সব কাজে কঠোর বিসিডিএস।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কেমিস্টের সনদ অর্জনের জন্য ফর্মেসির সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধ করছি। প্রতি কোর্সে ভর্তি করাচ্ছি। ঔষধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে আমাদের সমন্বয় রয়েছে। তবে, ওষুধ কোম্পানীগুলো যদি লাইসেন্সবিহীন দোকানে ওষুধ না দেয়; কঠোরতা অবলম্বন করে, তাহলে অবৈধ ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আইনের আওতায় থেকে ব্যবসা পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করছে কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি। তাদের আইনি ক্ষমতা নেই, তাই ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

ওষুধ ব্যবসায়ীদের একটি নিয়মে নিয়ে আসতে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, ঔষধ তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আর্ষণ করেছেন বিসিডিএস সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক রোমেল মল্লিক বলেন, যেসব ফার্মেসি নিয়ম ভঙ্গ করেছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আরো কিছু প্রক্রিয়াধীন। সতর্ক ও কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে কিছু দোকানদারকে। তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব ফার্মেসিকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও অভিযান চালানো হবে। নিয়মিত ফার্মেসির পরিদর্শন/মনিটরিং করে ন্যাশনাল হেলথ ইনিফরমেশন সিস্টেম (ডি এইচ আই এস-২) তে প্রেরণ করা হয়।

কক্সবাজার সদর উপজেলার বিজিবি ক্যাম্প, বাস টার্মিনাল, উপজেলা বাজার, লিংক রোড, খরুলিয়া বাজার ও চেরাংঘর বাজার, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং বাজার, কোটবাজার, মরিচ্যা বাজার, পালংখালী বাজার ও বালুখালী বাজার, রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজার, কাউয়ার খোপ বাজার ও রামু বাজার, মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া, নতুন বাজার ও গোরকঘাটা বাজার, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী বাজার, ডুলাহাজারা বাজার, মালুমঘাট বাজার, হাসপাতাল রোড, চিরিংগা স্টেশন, থানা রোড ও মগবাজার, টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর বাজার, হ্নীলা বাজার, লেদা বাজার, জাদীমুরা বাজার, সাবরাং বাজার ও টেকনাফ বাজার এলাকার মোট ২৫৫টি ওষুধের দোকান এবং ৩ টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ডিপো পরিদর্শন করা হয়।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলা/প্রতিরোধকল্পে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে দোকান মনিটরিং অব্যাহত আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ওষুধ বিক্রয়কারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আবশ্যক মনে করেন জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক রোমেল মল্লিক।

Exit mobile version