Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে লেগেছে প্রাণের ছোঁয়া


ছৈয়দ আলম:

মৌসুমের শুরু থেইে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র সাগরের কোলঘেঁষা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সাগর সৈকতে পর্যটকদের যেন মহামিলন ঘটেছে। জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট, সেন্টমার্টিন, হোটেল-মোটেল ও কটেজসমূহে প্রায় প্রতিদিন লাখেরও বেশি পর্যটক এখন অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের সব ইউনিট সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় নজরদারি বাড়িয়েছে। কোথাও যাতে কোনও অনিয়ম না হয় সেজন্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র সৈকত লাবণীর পাশে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটকদের অভিযোগ দ্রুত আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পুলিশ প্রশাসনের সাদা পোশাকধারী লোকজন পর্যটকদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অপরাধী শনাক্ত করার কৌশল গ্রহণ করেছে। মোতায়েন করা হয়েছে মহিলা পুলিশও।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, দেশি-বিদেশি অগণিত পর্যটক ৪ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস, কটেজ ও আবাসিক হোটেলে উঠছেন প্রতিদিন। পর্যটন মৌসুম ও বিভিন্ন ছুটিতে বার্ষিক পিকনিকে সব গ্লানি মুছে বেড়ানোর পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসব দেশি-বিদেশি পর্যটক এখন কক্সবাজারে ভিড় জমাচ্ছেন।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. রায়হান কাজেমী বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা প্রায় প্রতিদিন লাখেরও বেশি পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে। বিভিন্ন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশও তৎপর রয়েছে।

নারীদের সুইমিং জোন

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা সুইমিং জোন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জয়ের একান্ত প্রচেষ্টা ও জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের পরামর্শ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে তৈরি করা এ জোনে সাঁতার কাটতে পারবেন নারীরা। এ উদ্যোগের ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা, ছোট সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা নারীরা, দল বেঁধে ঘুরতে আসা নারীরা স্বস্তিতে সমুদ্র স্নান করতে পারবে বলে মনে করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে ডান পাশের হোটেল সিগাল বরাবর তৈরি হয়েছে নারীদের এ একান্ত জোন। জোনের দু’পাশে দুটি প্ল্যাকার্ড পুঁতে দেয়া হয়েছে। যার একপ্রান্তে লেখা রায়েছে ‘মহিলাদের সাঁতারের স্থান শুরু’। অন্যপ্রান্তে লেখা ‘মহিলাদের সাঁতারের স্থান শেষ’। এখানে নারীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন থাকছে সৈকতের নিরাপত্তা কর্মীরা। কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পাওয়া গেলে নেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। এছাড়া নারীদের নিরাপত্তার জন্য থাকছে লাইফ গার্ড।

সামুদ্রিক অ্যাকুরিয়াম

দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে দৃষ্টিনন্দন ব্যয়বহুল সামুদ্রিক অ্যাকুরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে কক্সবাজারে। শহরের ঝাউতলায় রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড নামে এই অ্যাকুরিয়ামটি স্থাপন করা হয়েছে। মালেশিয়ান একটি কোম্পানি অ্যাকুরিয়ামের যাবতীয় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রথমবারের মতো এ ধরনের সামুদ্রিক অ্যাকুরিয়াম দেশে হয়েছে, তাই পর্যটকদের পাশাপাশি কক্সবাজারবাসীও আনন্দিত। অনেকদিন বিদেশে মানুষ ও পর্যটকরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে যে অ্যাকুরিয়াম দেখত যেত এখন তা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন কক্সবাজারেই। সুউচ্চ ওভাল শেপের গ্লাসের অ্যাকুরিয়ামের মাঝখানে রয়েছে প্রবেশ পথ। রাস্তার পাশে সমুদ্রের নিচে-উপরে সুদৃশ্য নানা রঙের শৈবাল ও প্রবাল আর ৪৫ প্রজাতির মাছ। রাখা হয়েছে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ, বিভিন্ন আকারের সামুদ্রিক মাছ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এ ধরনের অ্যাকুরিয়ামে অক্টোপাস, হাঙর, ডলফিন, শার্কও রাখা হয়েছে। অ্যাকুরিয়ামের ভেতরে প্রবেশে আগ্রহীদের জন্য রয়েছে ডুবুরির পোশাক। রয়েছে থ্রিডি মুভি-নাইন ডি মুভি। এছাড়া পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য শার্ক, কচ্ছপ ও বিভিন্ন মাছের আকৃতির ম্যুরাল রাখা হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের অভ্যন্তরে চিত্ত বিনোদনের খোরাক হিসেবে বাংলাদেশের মধ্যে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিশ অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স এটি। পর্যটন শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে অ্যাকুরিয়ামটি।

দুই বছর আগে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইট-পাথর আর কংক্রিটে আবদ্ধ জীবন থেকে এখানে এসে খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিনোদনের স্বাদ পাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ শহরবাসী। ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারকে মোট ৮টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। ৮টি জোনের মধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, মার্কেটিং করার জন্য শপ, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, নামাজের স্থান, শিশুদের জন্য খেলাধুলা জোন, বিয়ে-পার্টির করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন করা যাবে বার-বি কিউ।

এছাড়া রয়েছে সুপরিসর পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার। এখানেই এলে কীভাবে যে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা কেটে যাবে বুঝাই যাবে না। এখানকার মূল আকর্ষণ ফিশ অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স। অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, সাগর ও মিঠা পানির বর্ণিল মাছের রাজত্ব। জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সমুদ্রের গভীর তলদেশে বসবাস করা নানা প্রাণির বসবাসের চিত্র। এখানে কেউ ঢুকলে মনে হবে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করছেন। অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স অবলোকনে বিদেশিদের জন্য ২০০০ হাজার টাকা, দেশি পর্যটক বা স্থানীয়দের জন্য ১০০০ হাজার টাকা ও শিশুদের জন্য সুলভ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় টিকেটের উপর রয়েছে ৫০% মূল্য ছাড়। রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার ও ইনচার্জ কাজী মো. নিজামুল ইসলাম জানান, বর্তমানে অধিকাংশ শিশু-কিশোর সমুদ্র ও মিঠা পানির মাছ সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই তাদের বিলুপ্ত হওয়া প্রাণিসহ বিভিন্ন মাছের সম্পর্কে ধারণা দিতে দেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে কক্সবাজারে।

 

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, বর্ষ ১, সংখ্যা ২ ও ৩।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন