parbattanews

কক্সবাজারে ভাড়া কমিয়েও মিলছে না ভাড়াটিয়া

করোনা সংকটে স্থবির পুরো দেশ। আয়-রোজগার নেই। দৈনন্দিন খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এই অবস্থায় ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন ভাড়াটিয়ারা। এতে খালি হয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ ভাড়া বাসা।

বাড়ি ভাড়া কমিয়েও ওইসব বাসায় মিলছেনা ভাড়াটিয়া। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাড়িওয়ালারা।

জানা যায়, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার হাজার হাজার কক্সবাজারে আসেন। তারা বিল্ডিং থেকে শুরু করে সেমিপাকা ও টিনশেটের বাড়িও ভাড়া করে নেয়। এতে হঠাৎ করে বেড়ে যায় ভাড়া।

১০ হাজার টাকার একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া গিয়ে উঠে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সেমিপাকা ও টিনশেট বাড়িরও ভাড়া বৃদ্ধি পায় দু’তিন গুণ। যার কারণে বিপাকে পড়ে অন্যান্য স্থানে চাকুরী করা কর্মজীবি মানুষেরা। অধিক দামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোন মনে চলছিল তাদের সংসার।

কিন্তু করোনা মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য একপ্রকার আশির্বাদ হয়ে আসে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি খালি হতে থাকে ভাড়া বাসা। এনজিও সংস্থাসহ কর্মজীবী মানুষেরা বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। অনেক ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালাকে না জানিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে নিরবে সটকে পড়ে।

সরেজমিনে শহরের টেকপাড়া, বাহারছড়া, পাহাড়তলী, সার্কিট হাউজ রোড, কলাতলী, তারাবনিয়ারছড়া, রুমালিয়ার ছড়া, আলির জাহাল, বিজিবি ক্যাম্প, নুনিয়ারছড়া, নতুন বাহারছড়াসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝুলানো হয়েছে, ‘ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে’ ভাড়াটিয়া চেয়ে ‘টু-লেট’ বা ‘বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে’ এ ধরনের লেখা।

তবে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ও ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান টেকপাড়া এলাকার হাবিব নামে একজন বাড়িওয়ালা। অথচ গত ৩ মাস আগেও ওইসব বাড়ি ভাড়া পাওয়া দুস্কর ছিল।

বাহারছড়া এলাকার বাড়িওয়ালা আমিনুল ইসলাম বলেন, তার বিল্ডিংয়ে ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া ছিল। কিন্তু করোনার শুরু থেকে আস্তে আস্তে খালি হতে থাকে ফ্ল্যাট। বর্তমানে শুধু ১২টি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়ে রয়েছে। ভাড়া ৫ হাজার টাকা কমানো হলেও বর্তমানে সহজেই মিলছে না ভাড়াটিয়া।

তারাবনিয়ার ছড়া এলাকার বাড়িওয়ালা হাসিবুল চৌধুরী বলেন, তার ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭টি খালি আছে। বাকি ৫টিতে ভাড়াটিয়া থাকলেও গত তিন মাস ধরে তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ভাড়া পাওয়া যায়নি। আগের চেয়ে দুই হাজার টাকা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া থেকেই তার পরিবারের সব ধরনের খরচ বহন করতে হয়। এখন তার জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাহাড়তলী এলাকার বাড়ির মালিক হাসান জানান, তার ১০টি সেমিপাকা বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩টিতে ভাড়াটিয়া রয়েছে। বাকিগুলো খালি হয়েছে দুই মাস আগে। ২টি বাড়ির ভাড়াটিয়া ৩ মাসের ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে সমাজকর্মী সাংবাদিক এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, শহরে মূলত দুই ধরনের বাড়িওয়ালা আছে। কিছু বাড়িওয়ালা আছে ব্যবসায়ী শ্রেণীর, ব্যবসার পাশাপাশি শহরে তার কয়েকটি বাড়ি আছে। তিনি বাড়ি ভাড়ার উপর তেমন নির্ভরশীল নয়। সেক্ষেত্রে তিনি চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়াদের বাসা যতটুকু সম্ভব কমিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে বাড়িওয়ালাদের একটি অংশ শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়ার উপর নির্ভরশীল। বাড়ি ভাড়া থেকেই তাদের সব ধরনের খরচ মেটাতে হয়। ফলে তারা ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। এতে ভাড়া দিতে না পেরে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। আবার অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে।

Exit mobile version