কক্সবাজারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা

নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাট ও অপরিকল্পিত নগরায়ন
Coxs Enviroment

স্টাফ রিপোর্টার:
একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন। অপরদিকে নির্বিচারে পাহাড় ও বৃক্ষ নিধন। এর সাথে জড়িত হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাশয় ভরাট। এ চারটি কারণে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা কক্সবাজার দিন দিন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড অচিরেই বন্ধ না হলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারকে আধুনিকায়ন(!) করতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি জরুরী অক্সিজেন সরবরাহকারী বৃক্ষ কেটে বনাঞ্চল সাবাড় করা হচ্ছে। সেই সাথে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বহুতল ভবন। নেই কোন উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই সরু ড্রেনগুলো পাহাড় কাটা মাটি এসে ভরে যায়। শহরে যত্রতত্র দখল-বেদখল আর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। এতে একদিকে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয়রা আশংকা করছেন, এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে কক্সবাজারে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

সাবেক ছাত্রনেতা লিয়াকত আলী পারভেজ জানিয়েছেন, “পর্যটন শহরে হাতেগুনা কয়েকটি ছাড়াও বাকি ভবন গুলো উন্নত প্রযুক্তি, টেকসই নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করেই আকাশচুম্বী করে তোলা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বহুতল ভবনের পাশ দিয়ে হাঁটলেই গা শিউরে ওঠে। কখন মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে।” এসব নিম্মমানের বহুতল ভবনগুলোও কক্সবাজারে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রথম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এছাড়া জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, তাবলের চর, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, কাকপাড়া, পশ্চিম পাড়া, মহেশখালী উপজেলার সাপমারার ডেইল, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী সী ক্রাউন পয়েন্ট, ডায়াবেটিস পয়েন্ট, হিমছড়ি পয়েন্ট ও টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে ভংঘুর বেড়িবাঁধ ও বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে।

টেকনাফের সাবরাং ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মোহাম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, “এদিকে গত কয়েক বছর ধরে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পূর্বে শাহপরীরদ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এভাবে সাগরের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে শাহ পরীর দ্বীপের একের পর এক গ্রাম।”
তিনি আরো জানান, “এসব গ্রাম ও সাধারণ মানুষদের রক্ষায় সরকারের বরাদ্ধ দেয়া টাকায় উন্নয়নের কাজ চলছে না। সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেট করে সরকারী সম্পদ পকেটস্থ করছে। ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকায় বরাবরই অবহেলিত হয়ে থাকছে।”

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, “পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট, নদী দখল, বৃক্ষ নিধন ও যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণের কুফল আমরা এখন বুঝছি না। এহেন কর্মকান্ডের বিরূপ ফল একদিন ভবিষ্যত প্রজন্মকে মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলবে।” তিনি মনে করেন, পরিবেশ রক্ষায় ঘুর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী কোন কাজ করতে দেয়া উচিত নয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, “পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযানে কয়েকজন শ্রমিক পাওয়া গেলেও প্রকৃত দোষীরা আঁড়ালে থেকে যাচ্ছে। ফলে দোষী তথা হুকুমদাতাদের ধরা যাচ্ছে না।” এ জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থে কক্সবাজারের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সমুদ্র চরের জীববৈচিত্র রক্ষা ও ম্যান গ্রোভ ফরেস্ট সহ পরিবেশ রক্ষায় সকল সচেতন হতে হবে।”

স্থানীয়রা আশংকা করছেন, পাহাড় কাটা ও বৃক্ষ নিধন বন্ধ, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে কক্সবাজারে ভবিষ্যতে ভয়াবহভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন