কক্সবাজারে সাংগ্রেং উৎসবে রাখাইনদের মিলনমেলা

সোমবার (১৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩ দিনের বর্ষবরণ উৎসব ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ শেষ হয়েছে বুধবার। এই তিনদিন নেচে গেয়ে মগীসন তথা নতুন বছরকে (১৩৮৫) বরণ করলো তারা। জলকেলিতে মেতেছেন নানা বয়সের মানুষ। স্থানীয়দের ভাষায় পরিচিত এই পানিখেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও। এ যেন মধুর সম্প্রীতি।

শহরের পেশকারপাড়া, টেকপাড়া, বৌদ্ধ মন্দির এলাকাসহ রাখাইন পল্লীতে নানা রঙে সাজিয়েছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের এক পাশে জল ভর্তি ড্রাম, কাঠের নৌকা রেখে অন্যপাশে রাখাইন তরুণ-তরুণীর দল, প্রত্যেকের হাতে রয়েছে পানি ছুড়ে মারার পাত্র। তারা একে অপরকে জল ছুড়ে করে পরিশুদ্ধির আহবান জানালেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজে ডিগ্রীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ক্রাক্রইচিং চৌধুরী বলেন, ‘এই দিনে কি-যে আনন্দ লাগে তা বলে বুঝাতে পারবো না। এই নতুন বছরকে নানাভাবে বরণ করতে আমরা রাখাইনরা প্রস্তুত থাকি। গতবছরও আমরা অনেক মজা করেছি, নেচেছি, গান গেয়েছি। এবছরও তার চেয়ে বেশি মজা হয়েছে। সকলকে রাখাইন নববর্ষের শুভেচ্ছা।’

নায়ার জিং নামের তরুণী বলেন, ‘গেল তিন বছর পর এই বছর সাংগ্রেং পোয়ে অংশগ্রহণ করলাম। এতে আমি খুব উৎফুল্ল। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবরাও এই উৎসবে নিজেদের মাতিয়ে তুলছে। আমরা সকলে মিলে প্রচুর মজা করছি।’

এদিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের নতুন বছরে বিশ্বে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়ার প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেন লা বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিন দিনের উৎসব শেষ হয়েছে। এবার শহরের রাখাইন পল্লীতে ১১টি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আনন্দ উৎসবে মেতেছিল সবাই। শুধু রাখাইন নয়, অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও উৎসবে এসে সম্প্রীতির মেলবন্ধনও তৈরি করেছেন। এই উৎসব কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, মহেশখালীর রাখাইন পল্লীতেও চলেছে। এসব অঞ্চলে ৬০-৭০টি প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবে মেতেছেন সবাই। আর সুষ্ঠু পরিবেশে বর্ষবরণ করতে পেরে তারা আনন্দিত।’

কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল বলেন, ‘রাখাইন পল্লীর প্রতিটি ঘরে ঘরে এই উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। অন্য ধর্মের লোকজনও তাদের উৎসবে যোগ দেয় এবং সহযোগিতা করে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করেছি। এই সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য যা যা দরকার জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতাসহ সবকিছু করবো। এই ঐতিহ্য ও সম্প্রীতি আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, রাখাইন, সাংগ্রেং উৎসব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন