কক্সবাজার উপকূলীয় লোকজন সরে গেছে নিরাপদ স্থানে

Coxs syclone 01

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ দ্রুত এগিয়ে আসায় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা দেয়ার পরপরই কক্সবাজার জেলাজুড়ে দূর্যোগ মোকাবেলায় তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন উপকূলীয় এলাকার সকল মানুষকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এই আদেশ পেয়ে উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কয়েক হাজার মানুষ কক্সবাজার উপকূল থেকে এসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে ও  বিভিন্ন হোটেল মোটেলে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে ‘মহাসেন’ দ্রুত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসলেও কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকায় এখনো কোন ধরণের দমকা হাওয়া কিংবা বৃষ্টিপাত শুরু হয়নি। তবে সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গুমোট আকার নিয়ে আছে। ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝেও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আদৌ আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে সরে আসবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ৮৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি দ্রুত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের কোন এলাকায় আঘাত হানবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ৪০০-৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে আসলেই এটি গতিবিধি পরিস্কার হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বিপদ সংকেত ঘোষণার সাথে সাথেই জরুরি বৈঠক করেছে। বেলা ১২টায়ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আবারও বৈঠক করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে তাঁরই সম্মেলন কক্ষে এই সব সভা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, বিপদ সংকেত পাওয়ার পরপরই উপকূলের, বিশেষ করে যারা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন এমন লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলার ৮ উপজেলা, বিশেষ করে উপকূলীয় উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, সদর উপজেলা, উখিয়া ও টেকনাফের অধিবাসীদের সরিয়ে আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও যাতে অনিরাপদ থাকতে না পারেন সেই ব্যবস্থায় নেয়া হয়েছে।’
উপকূলের যে সকল মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে অনাগ্রহী তাদের যেন জোর করে নিয়ে আসা হয় সেই নির্দেশও দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে উপস্থিত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ আবদুর রহমান জানান, বিপদ সংকেত ঘোষণার পরপরই উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। উদ্ধার কর্মীদের খবর দেয়া হয়েছে। তারাও লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ করবে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের (সিপিসি) ৬ হাজার ৬৬৫ জন, রেড ক্রিসেন্টের আড়াই হাজার কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলার অন্যতম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজ আহমদ জানান, উপকূলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে।
কুতুবদিয়া থেকে একজন সংবাদ কর্মী জানিয়েছেন, বিপদ সংকেতের পর থেকে এই দ্বীপের মানুষের মধ্যে ছুটাছুটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার আগেই তারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলার আরেক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (্ইউএনও) আনোয়ারুল নাশেদ জানান, উপকূলের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন। মাইকিংও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমিও উপকূলীয় এলাকার দিকে যাচ্ছি। লোকজন দ্রুত সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক সাংবাদিকদের জানান, তিনি জানান, উপকূলীয় উপজেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং আশপাশের দ্বীপ গুলোকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাটি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপাঞ্চলে জোয়ারের সময় ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন