কক্সবাজারে হুন্ডি সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয়

fec-image

প্রশাসনের কড়াকড়ি, ক্রসফায়ারের পর থেকে কিছুটা থমকে গিয়েছিল কক্সবাজার জেলার হুন্ডি কারবারি সিন্ডিকেট।

মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ব্যাপক রদবদলের সুযোগে আবারো সক্রিয় হয়েছে হুন্ডি কারবারি সিন্ডিকেট। বিভিন্ন স্পটে হাঁট বসিয়েছে তারা। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচার করে চলেছে। এই চক্রের কারণে সরকার হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব।

সুত্র জানায়, ২০১৭ সালের শেষের দিকে সারাদেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তালিকাভুক্ত ৬৩০ জনের মধ্যে কক্সবাজার জেলার ৬৩ জনের নাম রয়েছে। যার অধিকাংশ টেকনাফ, কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সদরের পিএমখালী ও ঈদগাঁও কেন্দ্রীক।

তাদের মধ্যে রয়েছে জয়নাল আবেদীন, কলিম উল্লাহ, গফুর, মোজাম্মেল হক, ইসমাইল, আজিজুল হক, আইয়ুব ওরফে বাইট্টা আইয়ুব, আব্দুস সত্তর, আব্দুল করিম, ইসমাইল, আব্দুল জলিল, মো. ইসহাক, লোকমান কবির, মোস্তাক আহমেদ, মো. ফারুক, আব্দুল কাদের, আব্দুর রশিদ, মোস্তাক আহমেদ, হাছন আলী, ইদ্রিস মিয়া, মীর কামরুজ্জামান, জিয়াউর রহমান, মো. ইউনুস, হোসেন আহম্মদ, ইয়াছিন, মো. আলী, আব্দুল মতিন ডালিম, এহেছান, একরাম, আনোয়ার, ওবায়দুল হক ফাহিম, ফোরকান উল্লাহ, কালু, পিন্টু, জালাল উদ্দিন, আজিম, রাসেল, নাসির উদ্দিন, শাহাদত হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, তৈয়ব আজিজ, জাফর আলম, মো. আলী, নুরুল আমিন, খুরশিদ, আবু তাহের, মো. মনিরুজ্জামান, মৌলভী আমান, উসমান, জহির আহমেদ, নুরুস সামাদ লালু, সবুজ ধর, আবু বক্কর আল মাসুদ, নির্মল ধর, বিমল ধর, মীর কামরুজ্জামান, এম এ হাসেম, মো. সালাম, আব্দুর রহমান, মো. সেলিম, শাহেদ রহমান নিপু, মো. শফিক ও মো. মাহবুব।

এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার করা তাদের ওই তালিকা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দুই দফায় দাখিল করা হয়। অবশ্য আদালতের নির্দেশে কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ীর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ কলাতলী এলাকার জয়নাল আবেদীন নগদ টাকা ও অনেক সম্পদের মালিক। মাত্র কয়েক বছর আগের চিত্র ঘাটাঘাটি করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

কলাতলী এলাকার একজন দোকানদারের ভাষ্য, হুন্ডি ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের বিয়ারার হিসাবে কাজ করেও অনেকে বিত্ত বৈভবের মালিক। জয়নালের কত সম্পদ তার হিসাব নিজেও জানে না।

২০১৭ সালের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুদ্রা পাচারকারীরা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা দেশের বাইরে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ পাচার করছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কুরিয়ার সার্ভিস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ইমিগ্রেশনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হন্ডি কারবারিরা সক্রিয়। তাদের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরাও। পাচার হওয়ার অর্থের একটি অংশের বিনিময়ে বাংলাদেশে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকের চালান। আর অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিভিন্ন হাত হয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হাতে চলে যাচ্ছে।

হুন্ডি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছে। তাছাড়া চোরাকারবারিরাও সুযোগ নিচ্ছে। তারা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র আসায় দেশের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

একটি প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে হুন্ডির মাধ্যমে চোরাকারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের সক্রিয়তা আরও বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দেশের বৈধ চ্যানেলে স্বল্প খরচে ও দ্রুততম সময়ে টাকা পাঠানোর নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের সম্ভাব্য সহায়তাকারী সন্দেহজনক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নজরদারিতে আনতে হবে।

পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান চোরাকারবারি এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, সিন্ডিকেট, হুন্ডি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন