parbattanews

কক্সবাজার শহরের ভাঙাচোরা সড়কে বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা

ভাঙাচোরা সড়কের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কক্সবাজার পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, উপ-সড়কের বর্তমান অবস্থা এতই খারাপ যে, যানবাহন চলাচল দূরের কথা হেঁটে চলাচলেরই অবস্থা নেই।

কক্সবাজার পৌর পরিষদের মেয়াদ ৩ বছর চললেও মেয়র এবং কাউন্সিলরেরা পূরণ করেনি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি। তিন বছরে ত্রাণ ও ভাতা বিতরণ ছাড়া মেয়র-কাউন্সিলরদের উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন নজরে পড়েনি। অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে পর্যটন শহর। এ নিয়ে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ। শ্রীহীন পর্যটন শহর বিমূখ হচ্ছে পর্যটকরাও। যার প্রভাব পড়ছে পর্যটনে।

কক্সবাজার পৌরসভার হাঙরপাড়া, পশ্চিম টেকপাড়া, পূর্ব টেকপাড়া, মধ্যম টেকপাড়া, উত্তর টেকপাড়া, জনতা সড়ক, আমেনা খাতুন স্কুল সড়ক, বার্মিজ স্কুল রোড, সিকদার মহল, পুরাতন ম্যালেরিয়া অফিস রোড, কবি নজরুল সড়ক, পেশকার পাড়া, কুমিল্লা পাড়া, চাউল বাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ৪ নং ওয়ার্ড। পৌর পরিষদের নির্বাচনে এখানকার কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম রুবেল উন্নয়নের ফুলঝুড়ি শোনায়। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর তার দেখা মেলেনি এলাকায়।

বিগত ৩ বছরে বৃহত্তর এই ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কাউন্সিলর নিজের বাড়ির রোড সংস্কার করলেও বাকি সব এলাকার অবস্থা শোচনীয়। টেকপাড়া চৌমুহনী থেকে চাউল বাজার পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টি হলে নালার পানি এসে অস্থিত্ব বিলীন হয় রাস্তার। বৃষ্টি না হলেও গর্তে ২৪ ঘন্টায় পানি জমে থাকে। ফলে সীমাহীন কষ্ট নিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে। একই অবস্থা ড্রেইনগুলোর। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ড্রেনে আবর্জনা জমে গেছে। কয়েকটি ড্রেইন পুনঃনির্মাণ করা হলেও অধিকাংশই অবস্থা নাজুক।

বার্মিজ স্কুল রোডের সড়ক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। কার্পেটিং উঠে গিয়ে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। দেখলে মনে হয় এখানে সড়ক ছিল অর্ধশত বছর আগে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। এতে সীমাহীন কষ্ট নিয়ে করতে হয় চলাচল।

টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুছা কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যে ৪নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। পৌরসভার ভোটের পর এখানে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। সব গলি-উপগলি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নালার পানি উঠে আসে রাস্তায়। পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে দিন দিন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে বৃহত্তর এই এলাকা।

৪নং ওয়ার্ডের মতো একই দশা অন্যান্য ওয়ার্ডেরও। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাসপাতাল সড়ক, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও স্টেডিয়াম সড়ক নিয়ে দুঃখ শেষ নেই পথচারীদের। খানা খন্দকে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন। ছোট-বড় গর্ত বৃষ্টি হলে পরিণত হয় মিনি সুইমিংপুলে। এতে চলাচল করতে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে চালকেরা।

গোলদিঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ী দিপু দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখান সড়কের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। এতে চলাচলে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

সরকারি বালিকা, স্টেডিয়াম ও হাসপাতাল সড়কের ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরের মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা। এখানে স্কুল, হাসপাতাল, অফিস ও আদালত রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সড়ক দিয়ে চলাচলা করে। কিন্তু সড়কের দৃশ্য দেখলে মনে হবে অজপাড়া গা। ভাল করে আধা কিলোমিটার সড়কও ঠিক নেই। এক হাত দুরত্বের মধ্যেও ভাল নেই সড়ক। সড়কের বুক চিরে বড় বড় গর্তে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। রোগীদের হাসপাতালে আসতে চরম কষ্ট পেতে হচ্ছে।

পর্যটন এলাকার লাবনী ও সি-ইন পয়েন্টের মাঝামাঝি হোটেল সী-গালের সামনের পর্যটন এলাকার প্রধান রাস্তাটির লক্কর ঝক্কর হয়ে থাকে সারা বছর। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এই রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। ছোট-বড় গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে হতাহত হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। এই সড়কের কারণে কক্সবাজার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক বেহাল। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু কাজ করে গর্ত ভরাট করে পৌরসভা, কউক আর সড়ক বিভাগ। কিন্তু তাদের এসব কাজে কিছুদিন পরই সড়কের আবারও একই অবস্থা হয়।

কলাতলী মোড় থেকে হোটেল সায়মন পর্যন্ত সড়কটি হরহামেশা জলাবদ্ধতায় আবদ্ধ থাকে। আশপাশের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা পানি রাস্তায় এসে জমে থাকে। আবর্জনায় নালা ভরাট থাকায় ময়লা পানিও রাস্তায় চলে আসে। নোংরা পানি চলাচলে পথ না থাকায় সেই পানি নামছে সৈকতে। এতে কলাতলী পয়েন্টের পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছে পর্যটকরা।

এছাড়া প্রধান সড়কের আলির জাহাল, রুমালিয়ারছড়া, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা, তারাবনিয়ার ছড়া, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা থেকে হলিডের মোড় পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে খানা খন্দক ও অগণিত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যান।

প্রেসক্লাব রোড ও জেলা পরিষদ সড়কের শোচনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলোতে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই সড়কে ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা। সড়কটি দিয়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপিরা চলাচল করলেও তবুও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

বিজিবি ক্যাম্প, আলির জাহাল, বাস টার্মিনাল, সদর উপজেলা গেইট এলাকা, পাহাড়তলী, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা সড়ক, লাইট হাউজ, এন্ডারসন সড়ক, সমিতিপাড়া ও বইল্যাপাড়া সড়ক মৃত্যুগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কাউন্সিলররা নিজেদের পকেটের চিন্তায় এলাকার উন্নয়ন ভুলে গেছে বলে মনে করছেন ভোটারেরা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শহরের প্রধান সড়কের হলিডের মোড় বাস টার্মিনাল হয়ে হলিডের মোড় পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল সড়ক জনপথ বিভাগের। ২০১৮ সালে যা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে কউক এই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। চলতি বছরেই দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার কাজ পরিচালনা করেছে কউক। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার কাজ না করায় ঠিকছে না সড়কের স্থায়িত্ব।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সড়কের বোবা কান্না শুনার যেন কেউ নেই। একপ্রকার অভিভাবকহীন পড়ে আছে পর্যটন শহরের সড়ক-উপসড়ক। ভঙ্গুর সড়ক দিয়ে যান ও জন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি লক্কর ঝক্কর সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া সড়কগুলো ভাঙাচোরা এবং ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় জনজীবন বিষিয়ে উঠেছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। কউক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান সড়ক কয়েক দফায় সংস্কার করা হয়। এক মাসের মধ্যে হলিডের মোড় থেকে হাসেমিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রধান সড়কের কাজ শুরু করা হবে। পরবর্তীতে কিছু জটিলতা লাঘব হলে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের কাজ করা হবে।

এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় জনসংখ্যা বেড়েছে, বর্ধিত হয়েছে পৌরসভা। কিন্তু সেই অনুপাতে পৌরসভায় জনবল বাড়েনি, বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধাও।

পৌরসভার ওপর জনগণের নানাভাবে চাপ বেড়েছে। চাপ পড়েছে সড়ক ও নালার উপর। এসব সমস্যা সমাধানে এখনো সরকারি কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। নাগরিকদের কর বাড়ানো হয়নি। সীমিত আয়ে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। একটি সড়কও ভাঙ্গা থাকবে না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সকল সড়কের সংস্কার করা হবে। এক বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে পর্যটন শহরের চেহারা।

Exit mobile version