parbattanews

কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াত সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লাহর দাফন সম্পন্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লাহর প্রথম নামাজে জানাযা বুধবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা মাওলানা আবদুল হালিম।

জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার আদরের ভাই জিএম রহিমুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ বিশ্বাস হয়নি। কিভাবে তিনি এত অল্প সময়ে চলে যাবেন ভাবিনি। তিনি বলেন, আপনাদের জিএম রহিমুল্লাহ ছিলেন ছোট মানুষ। হয়ে গেলেন জাতীয় নেতা। তিনি কক্সবাজারবাসীর গৌরব ছিলেন। তার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ কম মেলে।

জামায়াত নেতার জানাযায় দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযার নির্ধারিত স্থান কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ হলে তা দশটার আগেই কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন স্টেডিয়াম, পৌর-প্রিপ্যারেটরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, আশপাশের সড়ক উপসড়কে শোকাহত জনতা উপস্থিত হয়ে যে যেখানে জায়গা পান সেখান থেকে জানাযার নামাজে অংশ নেয়। জানাযাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার। তিনি বলেন, আজকে মহানবীর জন্মদিন। এমন দিতে জিএম রহিমুল্লাহর জানাযা হচ্ছে। ভাবতে পারিনি তিনি এত কম সময়ে বিদায় নিবেন। তিনি বলেন, ‘তিনি সকল শ্রেণীর মানুষকে সন্তুষ্ট রেখে রাজনীতি করতেন। মানুষের যে কোন বিপদে ছুটে যেতেন।

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, তার ঘরে অনেক সময় চাল থাকতো না। আমাদের চাল কিনে দিতে হতো। তার মতো নির্লোভ মানুষ হয় না। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও চাল-চলন ছিল সাধারণ মানুষের মতো।

বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, জিএম রহিমুল্লাহ আমার বন্ধু। তার সাথে আমার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, তা ঠিক। কিন্তু তার মতো সাহসী বলিষ্ঠ নেতা আমি আর দেখিনি। ২৪ ঘন্টাই রাজনীতি, সমাজসেবা ছিল তার কাজ।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, আমি দায়িত্ব পালনের কারণে জিএম রহিমুল্লাহকে কাছ থেকে দেখেছি। প্রায় সময় আমার পরামর্শ নিতেন। খুবই কর্মঠ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। জনগণের সেবার মানসিকতা লালন করতেন। একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তার মাঝে প্রভাব ছিলনা। তার মধ্যে কোন বদনামিমূলক কাজ দেখিনি, শুনিনি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি জিএম রহিমুল্লাহর সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন।

আরও বক্তব্য রাখেন-জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, নায়েবে আমীর ঝিলংজা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল গফুর, হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, শিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এড. ফরিদ উদ্দিন খাঁন, অধ্যক্ষ নুর হোসেন সিদ্দিকী, কুমিল্লা ভিকটোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, শহর জামায়াতের আমীর সাইদুল আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের কক্সবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা সালামত উল্লাহ, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মো. হাসান, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাশেম, এড. সলিম উল্লাহ বাহাদুর, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, শিবির নেতা হেদায়েত উল্লাহ, রবিউল আলম, রিদুয়ানুল হক জিসান প্রমুখ।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানাযায় অংশ গ্রহণ করে বক্তব্য দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম মাহমুদুর রহমান। পরিবাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাহিদ ইফতেখার।

মরহুম জিএম রহিমুল্লাহর দ্বিতীয় জানাজা সদর উপজেলার ভারুয়াখালীর দারুল উলুম মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট উম্মুক্ত মাঠে সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের পাহাড়ের চুড়া, বাসাবাড়ির আঙ্গিনা, পথে-ঘাটে লোকজন অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে জিএম রহিমুল্লাহর লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স নিজ এলাকা ভারুয়াখালি পৌঁছলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সবার প্রিয় জিএম রহিমুল্লাহকে একনজর দেখতে ছুটে আসে শিশু-কিশোর আবাল বৃদ্ধবনিতা। এ সময় অঝোর নয়নে অসংখ্য মানুষকে কাঁদতে দেখা গেছে। পাহাড়ের চূড়া বা বাড়ির আঙ্গিনা থেকে উকি মেরে দেখেন মা-বোনেরা।

বেলা ২ টা বেজে ৪০ মিনিটের দিকে মরহুমের নামাজে জানাজা আদায় করা হয়। ইমামতি করেন ভারুখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল বশর। জানাজা শেষে জিএম রহিমুল্লাহকে তার বাড়ির পাশে তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ভারুয়াখালীতে ২য় জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক,  বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা জহিরুল ইসলাম, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা শেফায়েত আজিজ রাজু, হোয়াইক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, এড. সলিম উল্লাহ বাহাদুর, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, সাবেক ছাত্রনেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাশেম, ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার, মাওলানা আবদুর রহিম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন এডভোকেট নেজামুল হক।

জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহ (৫৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের হোটেল সাগরগাঁওতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগের রাতে তিনি হোটেলের চতুর্থ তলার ৩১৬ নম্বর কক্ষে একাই ঘুমান। দুপুর পর্যন্ত ঘুম থেকে না ওঠায় তাকে ডাকতে যায় হোটেলের এক বয় ছেলে। এরপর ডাকতে যায় হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জিএম রহিমুল্লাহর শ্যালক শাহেদুল ইসলাম। তিনিও গিয়ে প্রথমে দরজা ধাক্কা দেন। কোনো সাড়া-শব্দ পাননি। পরে ভ্যান্টিলেটর দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন- জিএম রহিম উল্লাহ উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছেন। ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন তিনি মারা গেছেন। পরে পুলিশকে খবর দেয় তারা।

শাহেদ জানান, জিএম রহিমুল্লাহ মাঝে মধ্যে হোটেল সাগরগাঁওতে রাত যাপন করতেন। সোমবার রাতেও এসে হোটেলের চার তলার ৩১৬ নং কক্ষে ঘুমাতে যান। হোটেলে থাকলে সকালে ফোন করে বাড়ী থেকে নাস্তা আনাতেন। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি তা করেননি। জিএম রহিমুল্লাহ কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক।

Exit mobile version