দেশে দ্বিতীয়বারের মতো করোনার (কোভিট-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার চলতি বছরের ৩১মার্চ থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারী করলে সরকারের নির্দেশ মেনে রাঙামাটিতে পর্যটকদের আগমন বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
দীর্ঘ দু’মাস জেলায় পর্যটক না আসায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়েছে। নেমে এসেছে অর্থনৈতিক ধস। ঋণ, কর্মচারীদের বেতন, ভাড়া, সরকারি কর সবমিলে তারা দিশেহারা। ছোট-ছোট অনেক পর্যটন ব্যবসায়ী এ খাত থেকে ব্যবসা গুঁটিয়ে নিয়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা অংক কষছেন তারা ভবিষ্যতে এ শিল্পকে কিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবেন।
রূপের রাণী খ্যাত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি কাঠ, মাছ ব্যবসার পর পর্যটন ব্যবসা তৃতীয় অর্থনৈতিক বড় খাত। এ অঞ্চল পর্যটন শিল্পের জন্য দেশে আলাদাভাবে গুরুত্ব রয়েছে। সারা বছর পাহাড়ি অঞ্চলটিতে পর্যটকদের আগমন থাকে। তবে বিশেষ দিবস যেমন- বিজু-সাংগ্রাই তথা পহেলা বৈশাখ, ঈদ এবং শীতের মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মূলত এ সময়টাতে কয়েক কোটি আয় করে তাদের পকেটে ভরে। কিন্তু করোনার কারণে এ বিশেষ দিনগুলোতে পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ছিলো।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর আয় বন্ধ থাকায় তাদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে। গত বছরও করোনোর কারণে দীর্ঘ চারমাস পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে পড়তে হয়েছে ঋণের কবলে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ঋণের বোঝা ভারী হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ বলেন, আমরা প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টাকা আয় করি। কিন্তু করোনার কারণে আমরা কয়েকটি মৌসুম সেই আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর পর্যটক না আসায় আমরা অর্ধকোটি টাকা আয় করতে পারেনি। তারপরও পর্যটন ব্যবসায়ীরা করোনাকালীন বন্ধের সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এ বছর আয় করার জন্য তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে সৌন্দর্যবর্ধন এবং সংস্কার কাজে কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু করোনার নতুন ঢেউয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারী হলে ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়েছে। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে সর্বশান্ত হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন কটেজ মালিক সমিতির এ নেতা।
রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, আমরা গত বছরও কয়েক কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এইবার আশা করেছিলাম ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিবো। কিন্তু সব শেষ। ঋণের বোঝা, কর্মচারীদের বেতন সবমিলে আমাদের মাথায় বাজ পড়েছে।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, রাঙামাটির গুরুত্বপূর্ণ অথনৈতিক চালিকা শক্তি হলো পর্যটন ব্যবসা। বিগত বছর এবং এবছর সব মিলে আমরা এক কোটি টাকার অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আর কিছুদিন চলতে থাকলে আমরা কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হবো। সরকারের রাজস্ব থাকবে শূণ্য।