করোনাভাইরাস: কক্সবাজারে আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা চলছে পাড়া মহল্লায়

fec-image

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি দিয়ে সরকার ঘরে থাকার নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা কর্ণপাত করছে না। সামাজিক দূরত্ব মানছে না। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে। পুলিশী অভিযান ও জেল-জরিমানা করেও নির্দেশনা মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি এমন পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও চকরিয়ায়। প্রতিনিয়ত পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে চলছে আড্ডাবাজি। কোন কারণ ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষ আড্ডায় মেতে উঠছে। অথচ ঘরের বাহির না হতে এবং একত্রে আড্ডা দিতে বা ঘোরাফেরা না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর পর আবার একত্রিত হয়ে যায়।

গত রবিবার ও সোমবার সকাল থেকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, টেকনাফ সদর, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উখিয়ার ছেপটখালী, মণখালী, সোনারপাড়া, কক্সবাজার শহরের গোলদীঘিরপাড়, সমিতিপাড়া, ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, রুমালিয়ারছড়া, পিটি স্কুল, লাইটহাউসসহ একাধিক এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এই সকল এলাকার প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোরভাবে অবস্থান নেওয়ার ফলে প্রধান সড়কে হাতে গোনা কিছু যানবাহন চোখে পড়েছে। তারপরেও বিজিবি, সেনাবাহিনী ও পুলিশের চেকপোস্টে যানবাহনগুলোর চালককে জবাবদিহি করতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি এলাকার ভিতরের রাস্তায় বা মহল্লার রাস্তায় ছিল ভিন্নচিত্র। সকাল থেকেই পাড়া মহল্লায় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষকে রাস্তায় আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

টেকনাফের হ্নীলা রংগীখালী এলাকায় দেখা গেছে, ১০/২০ মিলে কথা বলছেন দাঁড়িয়ে। তারা করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলছেন কিন্তু নিজেরা সতর্ক হচ্ছেন না। এভাবে রাতদিন চলে আড্ডা। দোকানও খোলা থাকে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন আসলেও মুহুর্তে আবারো জড়ো হয়ে যায় মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক ওই এলাকার একজন মুদি দোকানদার বলেন, আমি সকাল থেকে দোকানে থাকি। দোকানের সামনে দিয়ে অনেকেই আসা যাওয়া করেন। অনেকে কিছু কেনাকাটা করতে আসেন আবার অনেকে হাঁটাহাঁটি করতে বের হয় রাস্তায়। আবার অনেককে অযথা গল্প করতেও দেখা যায়।

পথচারী আবু শামা বলেন, এখানে কিসের করোনা, গ্রাম তো গ্রাম। আমরা ঘরে থাকতে পারিনা ঘরে থাকলে কিভাবে ভাত খাবো। তাই কাজ করতে বের হয়ে গেছি।

অপরদিকে দেখা গেছে, এই কঠিন মুহুর্তে বাড়িতে না থেকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাঠে দেখা গেছে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে। বিশেষ করে হ্নীলা রংগীখালী, বাহারছড়ার শীলখালী, জাহাজপুরা ও শামলাপুর। উখিয়ার ছেপটখালী ও মনখালী এবং চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে ছেলেরা দলবেধে ক্রিকেট খেলছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত একদিনের জন্যও আড্ডা বন্ধ হয়নি উখিয়া উপজেলার বালুখালী ও থাইংখালী বাজার এলাকায়। ওই এলাকার বাসিন্দারা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন বিকালের পর প্রতিদিন রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়রা চা ও পুরির দোকান খোলে। সেখানে শত শত রোহিঙ্গা এবং এলাকার যুবক এসে আড্ডা জমায়।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসাইন বলেন, আসলে মানুষকে কোনোভাবে মানানো যাচ্ছে না। তিনি আড্ডার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। তিনি নিজেও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে গেছেন। আজ থেকে কোন মানুষকে বসতে দেওয়া হবেনা।

মেরিন ড্রাইভ সড়কে রেজুব্রীজ সংলগ্ন বিজিবি চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা বিজিবি কর্মকর্তা আকরাম বলেন, আমরা এই এলাকায় খুব কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কেউ যদি প্রয়োজন ছাড়া বের হয় তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, মানুষ আসলে অনেক চালাক। আমরা প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়েছি বলে মহল্লার রাস্তায় বের হয়ে ঘোরাঘুরি করে। আবার আমরা যখন মহল্লার রাস্তায় টহল দিতে যাই তখন আমাদের দেখে সবাই বাসায় ঢুকে যায়। আমরা চলে গেলে আবার বের হয়। এমন করলে কিভাবে সবাই নিরাপদে থাকবে।

কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, এই এলাকায় কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানে না। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও এই নিয়ম মানেন না। আড্ডা আর রাস্তায় মানুষের মেলা চলে। ময়লা আবর্জনাও পড়ে আছে রাস্তায়।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও অহেতুক, অকারণে বাইরে বের হওয়ায় গত ৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চকরিয়া উপজেলায় অভিযান পরিচালনাকালে সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় ১৯টি মামলায় মোট ৫৮,৩০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বেচ্ছায় নিজেকে আলাদা রাখা অর্থাৎ সেলফ আইসোলেশনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মানুষকে মোটিভেটেড করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ নিয়ম ভাঙছেন। আর তারা জেলাজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন।

রাস্তায় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, বাইরে বের হওয়া মানুষগুলো প্রশ্নের মুখে পড়ে অনেকেই বলছে, তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হয়েছেন। মূলত ঝামেলা এড়াতেই তারা এ ধরনের মিথ্যাচার করছে। কড়াকড়ি আরোপ এবং অনুরোধের পরও পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে যুবক-বৃদ্ধ এমনকি স্কুলছাত্রদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতার কিছুই নেই।

শুধু চায়ের দোকানে নয়, রাস্তার মোড়, অলি-গলি, বাড়ির ছাদ ও সিঁড়িতে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় লোকজনকে। সেনা, নৌ-বাহিনী ও পুলিশের গাড়ি দেখলে লোকজন দ্রুত সটকে পড়ে। দোকানিরাও তালা দিয়ে সটকে পড়ে। পরে আবার দোকান খোলে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, করোনাভাইরাস, সামাজিক দূরত্ব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন