করোনার ভয়াল থাবায়‘স্বপ্নের পাঠশালায়’তালা

fec-image

মোঃ লুৎফর রহমান, একটি এমপিও’ভুক্ত(মাধ্যমিক) বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক। শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এবং একঝাঁক শিক্ষিত প্রজন্মের কর্মসংস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন‘ গিরিকলি’ কিন্ডারগার্টেন। সেখানে সর্বশেষ শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৬শ, শিক্ষক-কর্মচারী ৩৫জন।

অপরদিকে মানিকছড়ি উপজেলার প্রবীণ শিক্ষক মরহুম মাস্টার ইব্রাহীম ভূইঁয়া ছিলেন, একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সজ্জন শিক্ষক। সারাজীবন শিক্ষকতা শেষে অবসরে যাওয়ার পরপর ২০১৪ সালে গড়ে তুলেছেন ‘মাতৃছায়া’ কিন্ডারগার্টেন নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এখানেও ছাত্রছাত্রী দেড় শতাধিক, শিক্ষক-কর্মচারী-১৩ জন।

এভাবে উপজেলায় ১৫টি কিন্ডারগার্টেন ও ৪টি নিম্নমাধ্যমিক (ননএমপিও) ‘স্বপ্নের পাঠশালায়’ কর্মরত প্রায় দু’শ শিক্ষক-কর্মচারীর জীবন ‘করোনার ভয়াল থাবায়’ এখন লন্ডভন্ড! টানা সোয়া এক বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চাকুরী হারিয়ে ক্ষেত-খামার ও মোটরযানে শ্রম বিনিময়ে করে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ওইসব শিক্ষক পরিবারগুলো!

উপজেলা সদর, ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয় ও বিদ্যালয় শুণ্য জনপদে গড়ে উঠেছে ১৫টি কিন্ডারগার্টেন, ৪টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে স্বপ্ন দেখিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং শিক্ষা সমাপনী পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে এলাকার ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেকে জড়িয়ে পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ও নিজের ভবিষৎ গড়ার স্বপ্নে ভিবোর হয়ে হয়ে সরকারি বা বে-সরকারি বড় প্রতিষ্ঠানে নিজেদের না জড়িয়ে জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল উপজেলার প্রায় দু’শ তরুণ ও সৃজনশীল ছেলে-মেয়ে।

এলাকায় শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানে সুযোগ করে দিয়েছিল বেশ কয়েকজন শিক্ষক। নামমাত্র বেতন-ভাতায় চাকুরীতে যোগদান করে নিজে ও পরিবারে সুখের পরশ জড়িয়ে দেওয়া স্বপ্ন আজ সন্ধ্যা রাতেই ‘করোনার’ মহামারীতে ভেঙ্গে চুরমার! এ যেন অংকুরেই বিনাশ! আর ভরা নদীর খরস্রোতে যেন হারিয়ে যায় জীবনের সব পরিকল্পনা! ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। থমকে যায় শিক্ষা কার্য়ক্রম,বন্ধ হয়ে যায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের বেতন-ভাতা! পরিবার-পরিজন ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে পরিকল্পিত সংসারে দেখা দেয় অভাব,অনটন।

ফলে উপজেলার কিন্ডারগার্টেনের প্রায় দু’শ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী একেবারেই বেকারত্ব বরণ করেন! ফলে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হিসেবে কেউ শ্রমিক, কেউ প্রান্তিক কৃষক, কেউ মোটরযানে যাত্রীপরিবহন করে অমানবিক জীবন-যাপন করছেন।

গিরিকলি কিন্ডারগার্টেন এর পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান‘ বলেন, আমি অভাবী সংসারে বেড়ে উঠা সন্তান। বাবা-মা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষা-জীবন শেষে কর্মসংস্থান পেয়ে, আমি পরিকল্পনা করেছি জনপদে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই আমি চাকুরীর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তাতে অনেক শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলাম। আজ আমি সফল হলেও এখন চিন্তিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের নিয়ে।

গাড়ীটানা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ন কবীর জানান, এই করোনায় আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। এখন না পারছি কাজ করতে, না পারছি দু’বেলা পেট ভরে খেতে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস্তবতা চিন্তা করলে আমরা এই দুঃসময়ে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না মাহমুদ জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনায় কর্মহীন (ননএমপিও) প্রায় দেড়’শ শিক্ষক-কর্মচারীকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাদ্দ থেকে গড়ে ১ হাজার টাকা হারে করোনার প্রথম ধাপে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউপি’র মাধ্যমে জনপদে কর্মহীন সকল পরিবারে খাদ্য ও নগদ সহায়তা বিতরণ চলমান আছে। এই মহাদুর্যোগে ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মহীন হওয়ায় তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে রয়েছে। এবারও প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমরা তাঁদের হাতে তুলে দেবো। এছাড়া নিতান্তই যারা খাদ্য সংকটে আছেন, তাঁরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ অথবা ৩৩৩ হট লাইনে কল করার অনুরোধ করছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন