করোনায় পাহাড়ে প্রথম আক্রান্ত জেলা হয়েও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে বান্দরবান

fec-image

দেশে মহামারী করোনাভাইরাস প্রার্দুভাব দেখা দেয় ৮মার্চ থেকে। এর ৩৭দিন পর ১৫এপ্রিল পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। বর্তমানে এই জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮জন। তারমধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৩।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান প্রথম করোনা আক্রান্ত জেলা হলেও এখনো অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে করোনা পরিস্থিতি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটেনি এই জেলায়।

অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। এই সাফল্যের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি-পুলিশ বাহিনীর অবদান উল্লেখযোগ্য। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাশাপাশি করোনাকালে অসহায়, কর্মহীন মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বান্দরবান আসনের সংসদ সদস্য ও পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং সহ দুটি পৌরসভা, সাত উপজেলা ও ৩৩ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। বসে নেই বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সচেতন নাগরিকরাও।

এদিকে সবার শেষে আক্রান্ত হলেও রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এখন হু হু করে বাড়ছে করোনা। আক্রান্তের সংখ্যায় এই দুটি জেলা বান্দরবানকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গত ৬মে রাঙ্গামাটিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে এই জেলায় ৬৩জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২৯ এপ্রিল। এই জেলায়ও আক্রান্ত হয়েছে ২৬জন। যার কারনে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে ভাগ্যবান হিসেবে মনে করা হচ্ছে বান্দরবান জেলাকে।

জানা গেছে, গত ১৫এপ্রিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের এক বাসিন্দা তাবলীগ থেকে ফেরার পর তার শরীরে কোবিড-১৯ এর উপস্থিতি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তিনিই বান্দরবানের প্রথম করোনা রোগী।

বর্তমানে জেলার লামা উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৮ (শরনার্থী ক্যাম্পে নমুনা দেওয়া ৩জনসহ), রোয়াংছড়িতে ২, রুমা উপজেলায় ১, থানচি উপজেলায় ২ এবং বান্দরবান সদরে ৫জন।

এছাড়া করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে (সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত) বান্দরবান সদর উপজেলায় ২৫১জন, নাইক্ষ্যংছড়ি ১৯৭জন, লামা ১৭৫, রুমা ১৬০, আলীকদম ১৪১, থানচি ৪৪, রোয়াংছড়ি ৪২জনসহ জেলায় সর্বমোট হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল ১০১০ জন। এদের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ৭৭১ জনকে। হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ১০৮ জন, তারমধ্যে ৭৪ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

আক্রান্ত রোগীর মধ্যে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৬জন, লামা ১০, সদর হাসপাতাল ৫, থানচি ৩, বান্দরবান সদর উপজেলা, রোয়াংছড়ি, রুমা ও আলীকদম উপজেলায় ১জন করে মোট ২৮জন করোনা পজেটিভ হয়েছে।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে ১০জন চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছে। গত ১২মে এসব চিকিৎসক বান্দরবানে যোগদান করেন। যোগদান করা চিকিৎসকদের পাঁচ উপজেলায় পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ৪ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন, আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন এবং রুমা ও লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন করে পদায়ন করা হয়।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, যতই সময় যাচ্ছে বিশেষ করে ঈদের পর থেকে বান্দরবানে করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী বাইরের এলাকা থেকে বা বাইরে থেকে আসা মানুষের সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে।

বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন জানান, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে জেলার তিনটি উপজেলা লকডাউনের আওতায় আনা হয়। পাশাপাশি জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় বাসিন্দা ব্যতীত বাইরের লোকজনের চলাচলে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, জেলা প্রশাসক, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন