করোনা রোগীদের জন্য উখিয়ায় ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল উদ্বোধন

fec-image

করোনা রোগীদের জন্য উখিয়ায় ১৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর, ব্র্যাক ও রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুরে উখিয়ায় হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস থেকে দেশের সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। উপজেলা ভিত্তিক আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালের মাধ্যমে মানুষের সেবা প্রাপ্তি অনেকটা নিশ্চিত হবে।

এসময় তিনি করোনা সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়।

উখিয়া কলেজের একটু দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৩ একর জমির উপর কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের সামান্য ভিতরে এই কোভিড হাসপাতালটির নির্মাণ হয়েছে।

কোভিড হাসপাতালের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজার অফিসের হেড অব অপারেশন ইনাকু টুকি, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, আরআরআরসি অফিসের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, উখিয়ার ইউএনও মো. নিকারুজ্জামান, ওসি মর্জিনা আকতার মর্জু, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩০ মার্চ আইসোলেশন হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর অর্থায়নে এই বৃহৎ আকারের আধুনিক করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে।

মূলতঃ ১৫০ বেডের এই হাসপাতালে ২০০ বেডের চিকিৎসা সেবার ফ্যাসিলিটি থাকবে।

হাসপাতাল নির্মাণ কাজের সক্রিয়ভাবে জড়িত একটি সুত্র জানিয়েছেন, গত ১৯মে ১৫০ জনের মেডিকেল টিম কক্সবাজার এসে পৌঁছে। তাদেরকে হাসপাতালটি ২০মে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে ট্রায়াল ব্যবস্থাপনা কাজ করছেন। প্রতিদিন ৩শিফটে ৫০ জন করে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, মিডওয়াইফ, ক্লিনার, আয়াসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড হাসপাতালটিতে ডিউটি করবেন।

১৫০ জনের মেডিকেল টিম ও সংশ্লিষ্ট আরো ১৫জনসহ মোট ১৬৫ জনের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা হিসাবে উখিয়ার ইনানীতে একটি বড় হোটেল ভাড়া করা হয়েছে। ২টি বাস ও ২টি আধুনিক মডেলের মাইক্রোবাস তাদের যাতায়াতের জন্য রাখা হয়েছে। আবার তাদের ব্রেকফাস্টসহ ৩ বেলা উন্নতমানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসম্মত খাওয়া, ২বেলা নাস্তা সরবরাহের জন্য অপর একটি রেস্টুরেন্টের সাথে চুক্তি করা হয়েছে।

উখিয়ার কোভিড হাসপাতালটিতে সব সময় ৩টি এ্যাম্বুলেন্স স্টেনবাই থাকবে। ২টি এম্বুলেন্স আভ্যন্তরীণ রোগী আনা নেওয়া করবে। অপর এম্বুল্যান্সটি চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দুরে কোথাও রোগী রেফার করা হলে সেখানে রোগী নিয়ে যাবে।

সূত্রটি জানিয়েছেন, এই কোভিড হাসপাতালটি রোহিঙ্গা শরনার্থী ও স্থানীয় নাগরিকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায় সাড়ে ১১লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য ১১টি পৃথক পয়েন্টে নির্মিত হচ্ছে, ১৯শো বেডের কোভিড আইসোলেশন হাসপাতাল। তারমধ্যে ৮০০ বেডের হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট আইসোলেশন হাসপাতাল গুলোর নির্মাণ কাজও আগামী ১০ জুনের মধ্যে শেষ হবে।

সূত্রমতে, উদ্বোধনের দিন বৃহস্পতিবার (২১ মে) যেসব রোগীর স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ২২মে ‘পজেটিভথ আসবে শুধু সেসব রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সেখানে ভর্তি করা হবে। এই কোভিড হাসপাতালটি ২১মে চালু করার পর কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়ার ২টি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের উপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী উখিয়া কোভিড হাসপাতালে রেফার করলেই সেখানে ভর্তি করা হবে।

অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালটির সকল চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, স্বাস্থ্য কর্মী, এ্যাম্বুলেন্স, খাদ্যসহ মাসিক সকল ব্যয়ভার ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ বহন করবেন। এ হাসপাতালে আপাতত শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ইউএনএইচসিআর এ করোনা সংক্রমণকালীন সময়ে কোভিড হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে।

এই কোভিড হাসপাতালটি কক্সবাজারের প্রথম পরিপূর্ণ একটি করোনা আইসোলেশন কোভিড-১৯ হাসপাতাল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইসোলেশন, ইউএনএইচসিআর, উখিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন