কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ইউনিটের শত কোটি টাকার যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত পড়ে আছে

bfidc

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘইহাটে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)-এর আওতাধীন কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ইউনিট ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান (পিএসও)-এর প্রায় শত কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রাংশপুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের কাপ্তাই ও বাঘাইহাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব যন্ত্রাংশ পড়ে আছে বছরের পর বছর।

দীর্ঘ ৯ বছরেও এসব মূল্যবান যন্ত্রাংশ সংরক্ষণে কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসব মালামালের অধিকাংশই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বিএফআইডিসির আওতাধীন অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ১৯৬০ সালে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ মহাপ্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতেই এই প্রকল্পের বার্ষিক কাঠ আহরণ ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ ঘনফুট। প্রতিষ্ঠার পর হতে চাহিদা অনুযায়ী কাঠ পাওয়ায় প্রকল্পটি অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী গাছ আহরণী কূপ না পাওয়ায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা বলে তৎকালীন সরকার ১৯৮৯-১৯৯২ সাল পর্যন্ত গাছ কর্তন নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ইউনিটটি মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়ে।

কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯৩ সাল থেকে পুনরায় সীমিত আকারে কাঠ বরাদ্দ দিলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। স্বল্প পরিমাণ কাঠ দিয়ে প্রকল্প চালাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশি লোকসানে পড়ে। ফলে ২০০৩ ও ২০০৫ সালে লে-অফের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ের ২টি ইউনিট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা প্রকল্পের শত কোটি টাকার যন্ত্রাংশ ও সচল যানবাহন, নৌযান, জাহাজ ইত্যাদি মরিচা পড়ে ক্রমেই নষ্ট হয়ে স্ক্রাপে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অবকাঠামো এখন পরিত্যক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী।

সূত্র মতে, বন্ধ হওয়ার পর প্রকল্পের যেসব মালামাল ও যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেগুলোর মধ্যে রাশিয়ার তৈরি ১২টি মূল্যবান কাটারবিলার ডিটি ট্রাক্টর, ১৬টি ট্রাক, ১৩টি ক্রেন, বুলডোজার, কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে বাঘাইহাটের বিএফআইডিসির অপর সচল প্রতিষ্ঠান লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্সের (এলপিসি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বন্ধ হওয়া কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ইউনিটের যেসব মূল্যবান মালামাল পড়ে আছে সেগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট লেখালেখি করা হয়েছে। তবে পরিত্যক্ত এসব মালামাল কি করা হবে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা যন্ত্রাংশের মূল্য ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা হতে পারে বলে এ কর্মকর্তা জানান।

বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে প্রায় শত কোটি টাকার মূল্যবান এসব যন্ত্রাংশ ও মেশিনপত্র এখন অকেজো স্ক্রাপ লোহায় পরিণত হয়েছে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন