কলাগাছের সুতায় তৈরি হচ্ছে নতুন শাড়ি, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে উপহার

fec-image

বান্দরবানে কলাগাছের সুতায় এবার আরও একটি উন্নত মানের কলাবতী শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এ জন্য আজ রোববার চরকায় সুতা কাটা শেষ করা হবে।

সোমবার (৮ মে) শুরু হবে শাড়ি বুননের কাজ। কালাঘাটার পিস হস্তশিল্প কেন্দ্রে বুননশিল্পীরা এখন এ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বুনন শেষ হলে শাড়িটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে, জানিয়েছেন উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইং সাইং উ মারমা।

জেলা শহরের কালাঘাটায় গিয়ে দেখা যায়, পিসের নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ নিজে তাঁতে শাড়ি বুননকাজে ব্যস্ত। পাশে রয়েছেন প্রশিক্ষক ও মণিপুরি বুননশিল্পী কবিতা দেবী। একটি কুটিরে কলাবতী বুননকাজের প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষামূলক প্রথম কলাবতী শাড়ি বুননশিল্পী রাধাবতী দেবী এবারে আসতে পারেননি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দত্ত সিংহ নামের একজন পুরুষ শিল্পী (কারিগর) কাজ করছেন। সেখানে উন্নত মানের আরেকটি তাঁত বসানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জন্য কলাবতী বুননকাজের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ড্রামে সুতা কাটা (চরকা) হলে বুননকাজ শুরু করা যাবে। সিল্ক ও কলাগাছের তন্তুর সুতার সংমিশ্রণে এবারের কলাবতী শাড়ি তৈরি করা হবে। শাড়ির নকশা কে করবেন, জানতে চাইলে দত্ত সিংহ বলেন, এটি মণিপুরি শাড়ির মতো হবে এবং সবাই মিলে আলোচনা করে নকশা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের কার্যালয় ও হস্তশিল্প কেন্দ্র জেলা শহরের কালাঘাটায়। সেখানে কলাগাছের সুতায় পাহাড়ি ও বাঙালি নারীরা কাজ করেন। তাঁরা তাঁতে শাড়ি ও কাপড় বুনছেন, কেউ নাটাইয়ে সুতা টানছেন, মসৃণ করছেন। মৌলভীবাজার থেকে মণিপুরি তাঁতি কবিতা দেবীকে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। কবিতা দেবী বললেন, পাহাড়ি নারীরা এমনিতে কোমরতাঁতে কাপড় বুননে দক্ষ। অনেকে ইতিমধ্যে মণিপুরি তাঁতে বুননকাজও শিখে ফেলেছেন।

কলাগাছের সুতায় শাড়ি, থামি (পাহাড়ি নারীদের পরনের কাপড়) ছাড়াও থলে, ঝুড়ি, হাতের ব্যাগ (পার্স) অফিসের কাজে ব্যবহারের ফোল্ডার, পর্দা, কানের দুল, পুঁতির মালা, নেকলেসসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও বিক্রি করেন পিসের হস্তশিল্প কেন্দ্রের নারীরা। কেন্দ্রের কর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বিভিন্ন পণ্য তৈরি করলেও এখনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে পারছেন না তাঁরা। শুরু করেছেন মাত্র।

পিসের নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ বলেছেন, এটি একটি উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প। জেলা প্রশাসকের উৎসাহে ও সহযোগিতায় কলাগাছের তন্তু দিয়ে পণ্য উৎপাদনে পিসের নারী কর্মীরা কাজ করছেন। এখন হাতের তৈরি সুতায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার একটি শাড়ি বানানোর কাজ চলছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রায় সময় খোঁজ নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে স্পিনিং মেশিন (সুতা কাটার যন্ত্র) স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কলাগাছের তন্তুকে মণ্ডে (পাল্প) পরিণত করে স্পিনিং মেশিনে সূক্ষ্ম ও মসৃণ সুতা পাওয়া যাবে। ওই সুতায় উন্নত মানের যেকোনো কাপড় বানানো সম্ভব। কিন্তু এসব করতে বিনিয়োগ দরকার। তিনি আশাবাদী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা পেলে তা করা সম্ভব হবে। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন এ নিয়ে সমীক্ষা করছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের লাইভলিহুড প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট এম এ আজিজ বলেছেন, কলাগাছের সুতায় পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের প্রচুর সম্ভাবনা থাকায় তাঁদের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়াধীন।

গত শুক্রবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদারে নেতৃত্বে একটি দল কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়িসহ হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেছে।

মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, দেখে এটি খুবই সম্ভাবনাময় খাত মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এই খাত অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপহার, কলাগাছ, নতুন শাড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন