parbattanews

কলাতলী চন্দ্রিমা এলাকায় বসতি উচ্ছেদ ও জমি দখলের পাঁয়তারা ভূমিদস্যুদের

কক্সবাজার শহরের কলাতলী চন্দ্রিমা এলাকায় দীর্ঘদিনের বসতি উচ্ছেদ ও খতিয়ানভুক্ত জমি দখলের পাঁয়তারা চলছে। ইতোমধ্যে ওই জমিতে বসবাসকারীদের ঘরছাড়া হতে কয়েক দফা হুমকি দিয়েছে ভূমিদস্যুরা। দাবি করেছে চাঁদা। ভয় দেখাচ্ছে মিথ্যা মামলার। অব্যাহত হুমকিতে এলাকার বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ ও শিশুরা উদ্বিগ্ন।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার সৃজিত বিএস ৪৬৯৭ এর মালিক চট্টগ্রামের মিরসরাই পশ্চিম মলিয়াইশের মৃত ওসমান গনির ছেলে নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহ।

৫ কবলামূলে খরিদা সূত্রে কেনা জমিতে ২০০৫ সাল থেকে তিনি ভোগ দখলে রয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালির বাগান রয়েছে। খামার বাড়ি, পানের বরজ গড়ে উঠেছে। ধান্য চাষি জমিতে চাষবাস করে চলে অনেক পরিবার।

জমির প্রকৃত মালিক নেছার উদ্দিনের স্বাক্ষর জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করেছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুচক্র। এখন জমি দখল নিতে তারা নানামুখী পাঁয়তারা করছে তারা।

মাত্র ৩ মাস ১৮ দিনের মাথায় সোলেহনামায় জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আদালতে চলমান দেওয়ানি মামলায় রায় ডিক্রিও হাসিল করেন শামসুল হুদা গং।

এমনকি, নেছার উদ্দিনের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে সমন নোটিশ জারিও করা হয়। এতে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। জালিয়াতচক্রের কঠিন শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা সত্তরোর্ধ বয়সী আবদুল মন্নান বলেন, এখানে অন্তত ৩০ বছর ধরে আমার বসতি। এগুলো নেছার উদ্দিনের জায়গা বলে সবাই জানে। হঠাৎ করে কিছু ভূমিদস্যু এসব জায়গা দখল করে নিতে চাচ্ছে। সেদিন ১০/১২ জন এসে হুমকি দিয়েছে। খুব বেপরোয়া আচরণ করতেছে।

মৃত সুলতান আহমদের ছেলে আবদুর রহিম (৪৮) বলেন, নেছার উদ্দিনের জমি চাষবাস করছি অন্তত ২০ বছর। দেখাশোনা আমি করে থাকি। খুরশেদ নামক ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। ক্ষেত-খামার ছেড়ে চলে যেতে বলছে। মামলার ভয় দেখাচ্ছে।

স্থানীয় মৃত ফকির আহমদের ছেলে হাফেজ আহমদ (৫৫) বলেন, চার বছর হচ্ছে, আমি জমি কিনে ঘরবাড়ি করেছি। চাষবাস, খেতখামার করে দুঃখ কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। হঠাৎ করে খোরশেদ নামের একজন ব্যক্তি টাকা দাবি করতেছে। না হলে বসতভিটা ছেড়ে দিতে বলতেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার সৃজিত বিএস ৪৬৯৭ এর মালিক চট্টগ্রামের মিরসরাই পশ্চিম মলিয়াইশের মৃত ওসমান গনির ছেলে নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহ।

নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহর নিয়োজিত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোস্তাক আহমদ বলেন, ২০১৪ সালে শহরের উত্তর রুমালিয়ার ছরার আবুল ফজলের ছেলে শামসুল হুদা গং বাদি হয়ে হেলাল উদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। যার মামলা নং -৬০৫/১৪। ১ নং বিবাদী শহরের ৫নং ওয়ার্ডের এসএম পাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।

মামলায় নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহকে ২নং বিবাদী করা হয়।

১নং বিবাদী হেলাল উদ্দিনের সাথে মামলার সোলেহনামা দেখানো হয়। তিনি নোটারি পাবলিক কর্তৃক মৌখিক দানের কল্পকাহিনী সাজিয়ে প্রতারণামূলকভাবে রায় ডিক্রি হাসিল করেন।

ইতিপূর্বে হেলাল উদ্দিন ৪০ শতক জমি ২০০৭ সালের ২৭ জুন ১৮২২ কবলামূলে ০.৪০ একর জমি কেরামত আলী নামক ব্যক্তিকে বিক্রি করেন। কেরামত আলী তার মালিকানাধীন জমি মর্তুজা কামাল নামক ব্যক্তিকে বিক্রি করেন। মর্তুজা কামাল ২০১৪ সালে ৪২০৯ নং কবলামূলে ৪০ শতক জমি নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহকে বিক্রি করেন।

উল্লেখ্য যে, হেলাল উদ্দিন ২.৩৮৮১ একর জমির মালিক। সেখান থেকে বায়া দলিলমূলে ৪০ শতক বিক্রিত জমি নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহর নিকট হস্তান্তর হয়। বাদ বাকি ১.৯৮৮১ একর জমির মালিক থাকেন হেলাল উদ্দিন।

কিন্তু মালিকানা স্বত্ব গোপন রেখে শফিউল আজম গংয়ের ৯ ব্যক্তিকে ২.১০ একর বিক্রি করেন তিনি। এতে তিনি বড় ধরণের দুর্নীতি করেছেন।

অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ বলেন, জমি বিক্রির বিষয়টি গোপন করে নুরুল কবির নামক ব্যক্তিকে ২০০৯ সালে আমমোক্তার নিয়োগ করেন হেলাল উদ্দিন।

নুরুল কবিরও প্রতারণামূলকভাবে আমমোক্তার অনুবলে বিভিন্ন জনকে বিক্রি করেন।

প্রাপ্য জমির চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন হেলাল উদ্দিন।

অপর-৬০৫/১৪ নং মামলার ১ নং বিবাদী হেলাল উদ্দিন বাদীদের সঙ্গে সোলেহনামা দেন। এর মাঝেই ২ নং বিবাদী নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহর খরিদা জমির সৃজিত ৪৬৯৭ নং খতিয়ান কীভাবে বাতিল হলো কারো বোধগম্য নয়।

বিস্ময় হলো, সোলেহনামা দিলো হেলাল উদ্দিন। খতিয়ান বাতিল হলো নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহর। কেমনে সম্ভব?

ভুক্তভোগি নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহ বলেন, অসংখ্য জমির প্রকৃত মালিকের সাথে প্রতারণা করেছেন শামসুল হুদা, হেলাল উদ্দিন গং। তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন নিরীহ মানুষ। অনুসন্ধান করলে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অসংখ্য অভিযোগ মিলবে।

দখলবাজ ও প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নেছার উদ্দিন মো. অলি উল্লাহ।

Exit mobile version