কাউখালীতে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রের আত্মহত্যা
কাউখালী প্রতিনিধি:
রাঙামাটি জেলার কাউখালীতে মোঃ নাহিদ (১২) নামে এক স্কুল ছাত্র গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া গ্রামের আবু তাহেরের ছোট ছেলে এবং পোয়াপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রাঙ্গীপাড়া গ্রামে এ হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম শোক বিরাজ করছে।
কাউখালী থানা পুলিশের ওসি (অফিসার ইনচার্জ) আব্দুল করিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ ব্যপারে কাউখালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
জানা যায়, নিহত নাহিদ উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া গ্রামের আবু তাহেরের ছোট ছেলে ও স্থানীয় পোয়াপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের অভ্যাসমত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট থেকে বাড়ি এসে যথারীতি স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে নাহিদ। এ সময় তার বড় ভাই গরুব্যবসায়ী তাসলিম মিয়া তাকে আজ স্কুলে না গিয়ে গরুর জন্য ঘাঁস কাটতে বলে বাজারে যায়। ভোরে দিনমুজুর পিতাও জীবিকার তাগিদে পাহাড়ে কাজে যায়। তার মা পার্শ্ববর্তী নাহিদের নানার বাড়ীতে গেলে ঘরে তখন সে একা ছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়।
তারা আরও জানান, সকাল ন’টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘরে কেও না থাকার সুযোগে নাহিদ তার ঘরে রক্ষিত গরুর রশি নিয়ে বাড়ীর নিকটে স্থানীয় আজম সওদাগরের পাহাড়ে উঠে অন্তত বিশ ফুট উঁচু একটি কাঁঠাল গাছের ডালের সাথে রশি লাগিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে বলে তারা অনুমান করেন।
প্রতক্ষ্যদর্শী মোঃ বাহার মিয়া জানান, সকাল বেলা আমি গরু খুঁজতে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে গেলে সেখানে কাঁঠাল গাছের সাথে নাহিদকে ঝুলতে দেখে চিৎকার করি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা দৌড়ে এসে তাকে গলা থেকে রশিমুক্ত করে নিচে নামানোর আগেই সে মারা যায়।
মৃত্যুর খবর পেয়ে কাউখালী থানার এসআই যোযৎসু চাকমা যশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাঙামাটি সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
১২বছরের নাহিদের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে এলাকায় বেশ রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে এত উঁচু গাছে উঠে ছোট্ট একটি শিশুর পক্ষে গাছের সাথে এত পরিপক্কভাবে রশি বেধে দিয়ে আত্মহত্যা করা মোটেই সম্ভব নয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা যশ চাকমা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, নাহিদের শরীরের কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে গলায় রশিতে ঝুলে থাকার কারণে কাটা দাগের চিহ্ন ছিল। লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে এখন কোন মন্তব্য করা যাচ্ছেনা।
জানা যায়, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে নাহিদ ছিল সবার ছোট। অন্য ভাইয়েরা সবাই কেউ গরু ব্যবসা বা কেউ দিনমজুর হিসেব কাজ করেন। ভাইদের মধ্যে একমাত্র নাহিদই লেখাপড়া করতো। পাশাপাশি ব্যবসার জন্য কেনা ভাইদের গরুও দেখাশুনা করতো সে। গরীব ঘরের সন্তান নাহিদ অনেক পরিশ্রমী ছিল বলে এলাকাবাসী জানান।
প্রতিবেশীরা বলেন, সে একাই কাউখালী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের রানীরহাট বাজারে ৮-১০টা গরু নিয়ে যেত । স্কুল থেকে বাড়ীতে এসে খেলাধুলার পরিবর্তে নিজের ইচ্ছায় লেগে যেত কাজে। গরুর ঘাঁস কাটা থেকে শুরু করে পরিবারের সব কাজেই সহযোগীতা করতো ছোট্ট নাহিদ।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসে এলাকার শত শত নারী পুরুষ। কেউ বুঝে উঠতে পারছিলনা, এমন কর্মঠ পরিশ্রমী শিশু কি কারণে এত উঁচু গাছের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করল।
এসময় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কান্নায়ও আকাশ ভারী হয়ে উঠে।