কাউখালী আওয়ামীলীগ প্রার্থী এস,এম চৌধুরী চেয়ারম্যান, মংসু উ ভাইস চেযারম্যান নির্বাচিত
॥ পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট ॥
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাঙামাটি জেরার কাউখালী উপজেলায় আওয়ামলীগ সমর্থিত প্রাথী এস,এম চৌধূরী (চৌচামং) ঘোড়া প্রতীকে ১৩৫০৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা(আনারস) । তিনি পেয়েছেন ১১৫০৮ ভোট এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অমরেন্দ্র (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ১১০৪ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইউপিডিএফ প্রার্থী মংসুউ চৌধুরী (চশমা) ১১৯৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন বিএনপির সমর্থিত জসিম উদ্দিন খোকন(তালা) পেয়েছেন ৯৩৭৩ ভোট এবং আওয়ামলীগ সমর্থিত নাছির উদ্দিন ফারুক (টিউবওয়েল) পেয়েছেন ৩৩৬৯ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যানি চাকমা (প্রজাপতি) ১২৯২১ ভোট পেয়ে পুনঃ নির্বাচিত হয়েছেন । তার প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস(কলস)। তিনি পেয়েছেন ১১৬৪৮ ভোট।
গতকাল শনিবার (১৫মার্চ) উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বিশটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়। সকাল আটটা থেকে কোন বিরতি ছাড়াই বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলে।
এদিকে তার আগে দিনভর উত্তেজনা,আতংক, জালভোট আর থেমে থেমে সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে কাউখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছে। এরা হলেন মোঃ মফিজুর রহমান (২৪), মোঃ নূর নবী (৫৫),মহিউদ্দিন (২৫), সাব উদ্দিন (২০) এদের মধ্যে চারজনকে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোট কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া সহ কিছু কিছু প্রিজাইডং অফিসারের পক্ষে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ করেছেন।
গতকাল সকালে বেতবুনিয়া ইউনিয়নে পূর্ব শিয়ালবুক্কা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী অর্জুন মনি চাকমা(আনারস)র এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ভোট কেন্দ্রে পুলিশ থাকলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌছলে ঐ এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়। সকাল সারে আটটায় পোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বিপুল সংখ্যক মহিলা ভোটার উপস্থিত থাকলেও অত্যন্ত ধীরগতিতে ভোট গ্রহন করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা.শাহআলম জানালেন প্রয়োজনের তুলনায় সহকারী প্রিজাইডং এবং পোলিং অফিসার দেয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সকাল নয়টায় বড়বিলি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় একেক ভোটার একাধিকবার জাল ভোট দিচ্ছে। ভোট দেবার পর যে অমোচনীয় কালী ব্যবহার করা হয়েছে তাতে কোন কালী ছিলনা। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আশিষ কান্তি দাশের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। দশটায় নতুন পাড়া কেন্দ্রে গিয়ে একই অবস্থা পাওয়া যায়। অমোচনীয় যে কালী ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে কোন কালী ছিলনা। একই কেন্দ্রে বিকেল চারটায় আবারো গেলে দেখা যায় নির্বিগ্নে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখলে প্রিজাইডিং অফিসার কাউখালী কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সৃজন ধর তরিঘরি করে কয়েকজনকে আটক করে কান ধরিয়ে ছেড়ে দেয়।
বেলা সাড়ে এগারটায় কাশখালী নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় জালভোট দেয়া হচ্ছে এবং অমোচনীয় কালী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রিজাইডিং অফিসার কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান কালীর বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কালী সরবরাহ করার জন্য। জাল ভোট সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এরিয়ে যান।
বেলা একটায় তারাবুনিয়া কেন্দ্রে গেলে জাল ভোটের ছড়াছড়ি দেখা যায়। কেন্দ্রের একেবারে সন্নিকটে এক প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের জালভোট দেয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করে ভোট কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। প্রিজাইডং অফিসার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দাশ ছিলেন এক প্রকার অসহায়ের মতো। তিনি সাংবাদিকদের জানান কেউ আপত্তি না জানালে আমাদের করার কিছু থাকেনা। সাংবাদিকরা জাল ভোট দিতে গিয়ে ফিরে আসছে এ ধরনের তথ্য দেখিয়ে দিলে তিনি চাপে আছেন বলে জানান। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কাউখালী থানার এ,এস আই কামাল হোসেন সাংবাদিকদের দেখে এদিক সেদিক যেতে থাকেন। বিকাল পৌনে পাচটায় বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় কিছু ভোটার জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখলে সটকে পড়েন।
কাউখালীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেএবং ভোটারদের সাথে কথা বলে সর্বত্র উদ্বেগ,উৎকন্ঠা ও আতংকিত দেখা গেছে। অনেক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটের পূর্বে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করেছে। যারা চাপ প্রয়োগ করেছে তাদের পছন্দের প্রার্থী যদি নির্বাচিত হতে না পারে এবং যারা নির্বাচিত হবেন তারা যদি হামলা মামলা কওে হয়রানি করতে থাকে এই শংকা প্রকাশ করেছেন।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রৈট সাইফুদ্দিনসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।