কানাডা যাচ্ছেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের আরও ১৪ জন

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার মুহিবুল্লাহর পরিবারের আরও ১৪ সদস্য কানাডার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তার পরিবারের সদস্যরা কানাডা যাচ্ছেন। এর আগে তার পরিবারের আরও ১১ জন ওই দেশে গেছেন। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে নাম না প্রকাশের শর্তে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুহিবুল্লাহর মা-সহ তার দুই ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্য কানাডার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করছেন। তাদের এখানকার প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সেখান থেকে কানাডায় রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। ক্যাম্প থেকে যাত্রাকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিনিধিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগেও একই প্রক্রিয়ায় মুহিবুল্লাহ নিহতের ছয় মাস পর তার পরিবারের ১১ সদস্যকে কানাডা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’

এই বিষয়ে ৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপস) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘের মাধ্যমে মুহিবুল্লাহর মা ও দুই ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানসহ ১৪ জনকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর তাদের কোথায় নেবে, বিষয়টি আমার জানা নেই।’

তারা হলেন, নিহত মুহিবুল্লাহর মা উম্মে ফজল (৬০), ছোট ভাই হাবিব উল্লাহর স্ত্রী আসমা বিবি (৩৫), সন্তান কয়কবা (১৫), বয়সারা (১৩), হুনাইসা (৯), মো. আইমন (৮), ওরদা বিবি (৫), মো. আশরাফ (৫) ও আরেক ভাই আহমদ উল্লাহর স্ত্রী শামছুন নাহার (৩৭), সন্তান হামদাল্লাহ (১১), হান্নানা বিবি (৯), আফসার উদ্দীন (৭), সোহানা বিবি (৫) ও মেজবাহ উল্লাহ (১)।

উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টের রোহিঙ্গা মো. জিয়াবুল হক বলেন, ‘কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মুহিবুল্লাহর দুই ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্যকে কানাডা নেওয়ার কথা বলে ক্যাম্প থেকে ঢাকা নিয়ে গেছেন। এই সময় পুলিশসহ জাতিসংঘের সংস্থার লোকজনও ছিলেন।’

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে গুলিতে নিহত হন শীর্ষস্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়। একইসঙ্গে শুরু হয় তৃতীয় কোনও দেশে পাঠানোর আলোচনা।

মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনও দেশে (থার্ড কান্ট্রি) আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন তারা। আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নাম উল্লেখ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তানসহ ১১ জন কানাডায় যাত্রা পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে মুহিবের স্ত্রী নাসিমা খাতুন, ৯ ছেলেমেয়ে ছাড়াও এক মেয়ের জামাইও ছিল। তাদের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় কানাডার সরকারি কর্মসূচির আওতায় ‘শরণার্থী’ হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো মুহিবুল্লাহর স্বজনদের একটি দল খুব দ্রুত কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। সেই বিষয়ে কয়েক দিন আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে জানিয়েছিল।’

ক্যাম্পের এআরএসপিএইচ-এর রোহিঙ্গা নেতা মো. ইয়াছিন বলেন, ‘মুহিবুল্লাহর মা-সহ দুই ভাইয়ের পরিবারকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরও কানাডায় নিয়ে যাচ্ছে বলে জেনেছি।’

তবে এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কানাডা, পরিবার, মুহিবুল্লাহ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন