কাপ্তাইয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে আগুন: জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, ক্ষতি হচ্ছে মাটির টপ সয়েল্ট

fec-image

চৈত্রের খড় তাপে পাহাড়ে,পাহাড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। আগুনের শিখায় পুড়ছে বনের পশু-পাখি ও সবুজ গাছ-গাছালি। নষ্ট হচ্ছে মাটির টপ সয়েল্ট।

চৈত্র-বৈশাখ মাস আসলেই প্রচণ্ড খড়তাপে গাছের পাতা শুকিয়ে নিচে ঝড়ে পরে স্তুপ হয়ে যায়। এ যেন এক ঝঞ্জাল মনে হয়। দেখতে তেমন একটা ভালো লাগে না। এক শ্রেণীর লোক ইচ্ছায়-অনিচ্ছাই বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বনের মধ্যে ফেলে দিয়ে মজা পায়। অন্য এক শ্রেণির মানুষ জুম চাষের জন্য প্রতি বছর বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন কারণে পার্বত্যাঞ্চলের রিজার্ভ বনের মধ্যে আগুন ও ঝুম চাষের ফলে পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি আগুনের লেলিহা শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এতে করে অবাসস্থল ও প্রাণী জগৎ পার্বত্যাঞ্চল হতে বিলুপ্ত হতে চলছে।

পাশাপাশি অনেক ছোট বড় সবুজ গাছ পুড়ে পশু খাদ্য বাগান ধবংস হচ্ছে। পাহাড়ে পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ফলে নষ্ট হচ্ছে মাটির টপ সয়েল্ট। যার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করছে পরিবেশবিদগণ। চলতি মাসে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন রিজার্ভ বনে একশ্রেণির লোক কারণে অকারণে বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বনের জীববৈচিত্র্যসহ বনের অনেক ক্ষতিসাধন করেছে।

এদিকে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত লোকজন বলেন, বন বিভাগ তথা বনের পাশে, সড়কের পাশে বসবাসরত লোকজনের সংবাদ পেয়ে মার্চ ও চলতি এপ্রিল মাসে বেশির ভাগ রাত কিংবা দিনে একাধিকবার পাহাড়ের আগুনের লেলিহান আমরা পানি দিয়ে বন্ধ করেছি।পাহাড়ে আগুন নিভানোর সময় দেখেছি অনেক বনের পশু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক সিএমসি কমিটির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল বলেন, এক শ্রেণির অসাধু লোকজন অযথা পহাড়ে আগুন ও ঝুম চাষ করার ফলে পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধবংস করছে। হুমকির মুখে পড়ছে পার্বত্যাঞ্চলের বন্যপ্রানী। এখনো প্রতিদিন হাতি বনের খাদ্য না পেয়ে লোকালয়ে এসে মানুষের বাসা-বাড়িতে হামলা করছে। তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ড যারা করছে তাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং পাহাড়ে আগুন ও ঝুম চাষ বন্ধ করার আহবান জানান।

এদিকে পার্বত্য চট্রগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ (ডিএফও) বলেন, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বনভূমি বা পাহাড়ে কেউ আগুন দিচ্ছেনা ।

কেউ আগুন দেওয়ার অপচেষ্টা করলে তাৎক্ষনিকভাবে তা প্রতিহত করা হয়। মূলত জুম চাষীগন কর্তৃক পাহাড়ে চাষ করার জন্য আগুন দিচ্ছে। আগুন দেওয়ার ফলে পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাটিতে সমস্ত উপকারী অণুজীব আছে সেগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভূমির উর্বরতা ক্ষয়সাধিত হয়। যার ফলে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয় এবং বন্যপ্রাণী খাবার সংকট দেখা দেয়। যার ফলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসে। পাহাড়ে আগুন দেওয়ার ফলে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্বন্ধে স্থানীয় জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি পাহাড়ে আগুন দেওয়া থেকে বিরত থাকার প্রচারণামূলক কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন চেস্টা করছি যার ফলে খালি পাহাড়গুলোতে বনায়ন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে জনগনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধিত হবে বলে মত প্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, জীববৈচিত্র্য, টপ সয়েল্ট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন