parbattanews

কাপ্তাই হ্রদে খাঁচায় মাছ চাষের বিপুল সম্ভাবনা

DSCF8625

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
দেশের সর্ব বৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদে ৬ টি প্রজাতির সু স্বাদু মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে আরো ৬ প্রজাতির মাছ এবং ক্রমহ্রাসমান প্রজাতির তালিকায় রয়েছে আরো ৬ প্রজাতির মাছ। কার্প জাতীয় মাছের ভান্ডার হিসাবে হিসাবে পরিচিত কাপ্তাই হ্রদে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন আশংকাজনক হারে কমে আসলেও বিভিন্ন ছোট প্রজাতির মাছের উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এক মত বিনিময় সভায়  মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম সাইফুল ইসলাম এই তথ্য জানান। সভায় মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের বিভিন্ন গবেষণার বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য প্রদান করা হয়।

মৎস্য গবেষনা উনষ্টিটিউটের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে জানানো  হয় কাপ্তাই হ্রদে দেশী বিদেশী মোট ৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে যে সব প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার মধ্যে আছে  সীলন, দেশী সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মোহিনী বাটা এবং দেশী পাঙ্গাস। বিলুপ্ত প্রায়  প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে দেশী মহাসোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা এবং সাদা ঘনিয়া। ক্রমহ্রাম মাছের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাতি পাবদা এবং বড় চিতল।

গবেষনায় উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে যে সব প্রজাতির মাছের আধিক্য রয়েছে তার মধ্যে আছে চাপিলা, কেচকি, কাঁটা মইল্লা, তেলাপিয়া, কালি বাউস, আইড়, বাটা, ফলি ও মলা। দূর্ঘটনাক্রমে কাপ্তাই হ্রদে যে সব মাছের আগমন ঘটেছে এবং হ্রদে যে সব মাছের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে আছে গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্পিও, রাজপুটি, নাইলোটিকা, থাই মহাশোল, আপ্রিকান মাগুড় এবং থাই পাঙ্গাস ।

মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের গবেষনায় বলা হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজাতি বিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বানিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন শতকরা ৮১ ভাগ থেকে শতকরা ৫ভাগে নেমে এসেছে অপর দিকে ছোট মাছের উৎপাদন শতকরা ৮ভাগ থেকে বেড়ে শতকরা ৯২ ভাগে পৌছেছে।

কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিলুপ্ত হওয়া এবং কাপ্তাই হ্রদের সুস্বাদু মাছ হিসাবে পরিচিত কার্প জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল) এর উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে জানানো হয় কার্প জাতীয় মাছের ৪ টি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র রয়েছে  সেগুলো বিশেষ করে কাচালং চ্যানেল, বরকল চ্যানেল, চেঙ্গী চ্যানেল এবং রীংকং চ্যানেল গুলো বিনস্ট হয়ে গেছে ফলে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে। বিকল্প উপায় হিসাবে কাপ্তাই হ্রদে প্রতি বছর মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে ২৫ হতে ৩০ টন পর্যন্ত কার্প জাতীয় মাছের যে পোনা ছাড়া মহয় তা কাপ্তাই হ্রদের সার্বিক আযতন হিসাবে অনেক কম।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদনের যে অবস্থা  তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই হ্রদে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের  খাতায় আরো নতুন প্রজাতির নাম অর্ন্তভূক্ত হবে। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে কাপ্তাই হ্রদের যে বিশাল আয়তন সে তূলনায় হ্রদে মাছের খাদ্য নিতান্তই কম। বিশেস করে এখানে প্রকৃতির উপরেউি মাছের খাবারের বিষয়টি নির্ভরশীল।

কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে হ্রদের সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য অধিদপ্তরের এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে পেন কালচার বা খাঁচা দিয়ে মাছ চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহায়ক। এর মাধ্যমে একটি নির্দিস্ট স্থানে খাচায় মাছ পালন করা হয় বিধায় মাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ এবং পরিচর্যা সহজতর হয়। তবে কাপ্তাই হ্রদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছ চাষে আইনগত জটিলতা থাকায় এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলে এবং কাপ্তাই হ্রদের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংযোজন ও সংশোধন করে হ্রদে খাঁচায় মাছ চাষ সম্প্রসারন করা গেলে তা লেকের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

Exit mobile version