কাপ্তাই হ্রদ বাঁচলে আমরা বাঁচবো: চেয়ারম্যান বিএফডিসি

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পিউস কস্তা বলেছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচাতে হবে। এই হ্রদের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জনগনের আমিষের চাহিদা পূরনে সহায়ক হবে। কাপ্তাই হ্রদ বাঁচলে আমরা বাঁচবো, আমরা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কাপ্তাই হ্রদ আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই এই সম্পদকে রক্ষার জন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে হ্রদের উপর নির্ভরশীল অতি দরিদ্র জেলেদের মাঝে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের খাদ্য শস্য বিতরনের উদ্বোধন কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাঙ্গামাটিস্থ কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপনন কেন্দ্রে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার হাসান জামান খান।

বিএফডিসির চেয়ারম্যান পিউস কস্তা কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী বছরের মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে বেশী পরিমানে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্তির উদ্যোগসহ হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহনের কথা জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার কাপ্তাই হ্রদের উন্নয়নে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে ২৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।

চেয়ারম্যান মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে দরিদ্র জেলে পরিবারদের জন্য বিমেষ ভিজিএফ কার্ড প্রচলনের উদ্যোগকে জেলেদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে আমরা যদি মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করি এবং হ্রদে অবমুক্তকৃত পোনা বড় হতে সূযোগ দিই, তাহলে এই সব মাছে কাপ্তাই হ্রদ আবারো পরিপূর্ন হয়ে উঠবে।

বিএফডিসি রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার হাসান জামান খান, সকলের সম্মিলিত সহায়তায় কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের চিত্র উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সকলের প্রচেষ্ঠায় এই হ্রদ পুর্বের গৌরবে ফিরে যাবে। তিনি বিগত তিন বছরের বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে রাজস্ব ব্যয় মিটিয়ে ৫কোটি টাকা লাভ হয়েছে, যা বিগত অর্থ বছরের চাইতে ৩৭লক্ষ টাকা বেশী। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে কর্পোরেশনের বিভিন্ন অবতরন ঘাট গুলো হতে মাছের রয়েলটি বাবদ ৭কোটি ৬৬ লক্ষ টাকাসহ ৮কোটি ১৬ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে, যা বিগত অর্থ বছরের চাইতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বেশী। এছাড়া ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে হ্রদ হতে বিভিন্ন প্রজাতির ৮হাজার ৭শত মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়েছে, যা বিগত অর্থ বছরের চাইতে ৩ শত মেট্রিক টন বেশী।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, কাপ্তাই হ্রদের আয়তন হিসাবে হ্রদে যে পরিমান মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয় তা অতি নগন্য তাই পোনা অবমুক্তির পরিমান বৃদ্ধির প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রয়োগ করে হ্রদের মাছের পরিমান বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহনসহ খাঁচায় মাছের চাষের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

জেলা প্রশাসক প্রতিবছর মাছের রয়েলটি হতে যে আয় সে আয় হতে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নূন্যতম শতকরা ১ ভাগ করে বোনাস প্রদানসহ রয়েলটি হতে অর্জিত অর্থের একটি অংশ হ্রদের জেলেদের উন্নয়নে ব্যয় করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, এতে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে কাজের উদ্দীপনা সৃষ্ঠির পাশাপাশি জেলেদের মাঝে হ্রদের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, চলতি মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল অতি দরিদ্র জেলে পরিবারের জন্য ১২হাজার ৬শত ৯৬টি বিশেষ ভিজিএফ কার্ড প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে দরিদ্র জেলেরা মোট ৪০কেজি করে চাল পাবেন। এর জন্য ৫শত ১৮ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ৫২৮২টি, লংগদু উপজেলায় ২৭০৭টি, বরকল উপজেলায় ২৩৮২টি, বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৬৫৯টি, জুড়াছড়ি উপজেলায় ২৫৬টি, নানিয়ারচর উপজেলায় ৪৭৮টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৩২৪টি এবং বিলাইছড়ি উপজেলায় ৬০৮টি কার্ড রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন