কারা থাকছেন পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের নতুন নেতৃত্বে
মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
পার্বত্য জনপদের বাঙ্গালীদের স্বার্থ রক্ষার দাবীতে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরষিদের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল খুব কাছাকাছি। আগামী ২৫ এপ্রিল পাহাড়ের রানী খ্যাত রাঙ্গামাটিতে সংগঠনটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গুছিয়ে এনেছে সংগঠনটির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। ইতিমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝেও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এ কাউন্সিল।
১৯৯১ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কারা কারা আসছেন এমন আলোচনা চলছে পাহাড়ী তিন জেলার প্রতিটি উপজেলায়। অনেকের নাম আলোচিত হলেও তৃনমুলের নেতাকর্মীরা সংগঠনের গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকৃত ছাত্রদেরকেই ছাত্র সংগঠনটির শীর্ষ পদে দেখতে চায়। তারা মনে করে অছাত্রদের হাতে সংগঠনটির মুল নেতৃত্ব অর্পিত হলে সংগঠনের গতিশীলতা হারাবে। অছাত্র, ঠিকাদার, চাঁদাবাজ বা ব্যবসায়ীরা সংগঠনের মুল নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলেও মনে করছে সংগঠনের প্রাণশক্তি হিসেবে পরিচিত তিন পার্বত্য জেলা পঁচিশ উপজেলার তৃণমুল নেতাকর্মীরা। তাই সংগঠনের মুল নেতৃত্বে ছাত্রদের এগিয়ে রাখতে চায়।
পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে সংগঠনের নতুন নেতা হিসেবে সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম সম্রাট (বান্দরবান), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সারওয়ার জাহান (খাগড়াছড়ির পানছড়ি), রাঙ্গামাটি জেলা বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল মজিদ (খাগড়াছড়ি) ও সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মো: ইব্রাহিম মুনীর (খাগড়াছড়ির তবলছড়ি) এর নাম ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে বান্দরবানের এইচ এম সম্রাট বিগত একযুগেরও বেশী সময় ধরে সাংগঠনের সাথে জড়িত থেকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছেন। খাগড়াছড়ির মো: আবদুল মজিদও এ সংগঠনের সাথে জড়িত বিগত দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে। দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে ভুমিকা রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সারওয়ার জাহান। দীর্ঘ একযুগের মতো সময় ধরে এ সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন রাঙ্গামাটি জেলা বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ। সংগঠনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে তৃণমুল নেতাকর্মীদের কাছে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করেছেন মো: ইব্রাহিম মুনীর। এদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে। এক্ষেত্রে সম্রাট, সাব্বির ও সারোয়ারই অধিক এগিয়ে বলে জানা গেছে।
তৃণমুলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য বাঙ্গালীদের এ দু:সময়ে ছাত্রদেরর হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে চায় তারা। বিবাহিত এবং ব্যাবসায়ীদেরকে সংগঠনের নতুন নেতা হিসেবে দেখতে চায় না সংগঠনটির তৃণমুল নেতাকর্মীরা। সে হিসেবে নতুন নেতৃত্বের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সারওয়ার জাহান, সাবেক অর্থ সম্পাদক মো: ইব্রাহিম মুনীর ও রাঙ্গামাটি জেলা বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ‘কে সংগঠনটির নতুন নেতা হিসেবে এগিয়ে রাখছে।
তবে কাউন্সিলে ভোট দিয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার কোনো সুযোগ থাকছে না। মূলত বাঙালী ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা সংগঠন নাগরিক পরিষদের নেতারাই অভ্যন্তরীন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটি মনোনয়ন দেবেন। তবে পরিষদের কয়েকজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে পার্বত্যনিউজকে বলেন, এই নিয়ম বদলানো উচিত। কাউন্সিলে সাধারণ সদস্যদের গোপন ভোটের মাধ্যমে কমিটি করা গেলে তাতে সংগঠনটি আরো গণতান্ত্রিক ও কার্যকর হতো। নেতারা দলীয় কার্যক্রম ও সদস্যদের প্রতি আরো বেশি আন্তরিক হতো।
পার্বত্য জনপদের বাঙ্গালীদের স্বার্থ রক্ষার দাবীতে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরষিদের নতুন নেতৃত্বে কে বা কারা আসছেন এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া নিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও সংগঠনের কাউন্সিলকে সফল করতে নিরলস পরিশ্রম করার জন্য সংগঠনের আহবায়ক শেখ আহাম্মদ রাজু‘কে ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৫ এপ্রিল পাহাড়ের রানী খ্যাত রাঙ্গামাটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংগঠনের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া।
তবে চব্বিশ বছর বয়সী পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নতুন নেতুত্বে কে বা কারা আসছেন, কাদের হাতে অর্পিত হচ্ছে পাহাড়ের অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিবেদিত এ সংগঠনের পতাকা তা জানার জন্য সকলের দৃষ্টি আটকে আছে ২৫ এপ্রিলের কাউন্সিলের দিকেই।