parbattanews

কারা বসছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে

10822443_10204498063946901_844825728_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

বহু জল্পনা-কল্পনার পর মহান জাতীয় সংসদে পাস হলো বহুল আলোচিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশোধন বিল-২০১৪। সদ্য পাস হওয়া এ বিল অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ১ জন চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠিত হবে। যার কলেবর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫-তে উন্নীত করা হলো।

নতুন সংশোধীত আইনানুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে উপজাতীয়দের থেকে একজন চেয়ারম্যান ছাড়াও জেলায় বসবাসরত জনগোষ্ঠির জনসংখ্যানুপাতে সদস্য মনোনিত করা হবে। সদস্যদের মধ্যে চাকমা তিন জন, মারমা তিন জন, ত্রিপুরা তিন জন, অ-উপজাতী জনগোষ্ঠি হতে তিন জন, অ-উপজাতীয় মহিলা এক জন ও উপজাতীয় মহিলা একজন।

চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইথোঅং মারমা। এর বাইরে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম ত্রিপুরা, মারমা সম্প্রদায়ের অপর প্রভাবশালী নেতা কংজরী চৌধুরী এবং লবিং এ পিছিয়ে নেই পানছড়ি কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি‘র বড় ভাই। সেদিক থেকে তিনি দৌড়ে অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সরকারের প্রতি আনুগত্য ও ক্লীন ইমেজের কারণে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইথোঅং মারমা খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

তবে চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ের ফলাফল যাই হোক এদের একজন চেয়ারম্যান হলেও বাকীদের সদস্য হিসেবে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়না।

বাঙ্গালী কোটায় সদস্য হিসেবে আওয়ামলীগের তৃনমুল পর্যায়ে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক, খাগড়াছড়ি জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, খাগড়াছড়ি জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি নির্মল চৌধুরী, আওয়ামলীগ নেতা আশীষ ভট্টাচার্য্য, কল্যাণমিত্র বড়ুয়া, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. আবুল কাশেম চৌধুরী, জেলা আ.লীগের শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক মো: দিদারুল আলম ও মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এম আবদুল জব্বার। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মহলে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে চাউর হচ্ছে। এদের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শানে আলম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. শামছুল হক ও জেলা আ.লীগের শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক মো: দিদারুল আলম অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে অভিজ্ঞ মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে বাঙ্গালী কোটায় নিয়োগ পাওয়া থেকে বাদ পড়তে পারেন বর্তমান সদস্য মো: সাহাব উদ্দিন।

মারমা কোটায় নিয়োগ পেতে ঢাকা-খাগড়াছড়ি জোর লবিং করছেন সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা কংজরী চৌধুরী, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগ‘র সহ-সভাপতি নেতা মংক্যচিং চৌধুরী, জেলা আ. লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংসেপ্রু চৌধুরী অপু, লক্ষীছড়ি উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেম্রাচাই চৌধূরী, গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক মেমং মারমা, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ক্রইসাঞো চৌধুরী। এদের মধ্য থেকেই বেছে নেয়া হবে তিনজনকে। আবার সিন্ধুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের টানা চারবারের চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চৌধুরী ও হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী সদস্য হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছেন।

চাকমা কোটায় নিয়োগ পেতে শাসকদল আওয়ামীলীগ ও সরকারের বিভিন্ন মহলে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য বীর কিশোর চাকমা অটল, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুভাষ চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি অধ্যাপক নিলোৎপল খীসা এবং লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নির্মল কান্তি চাকমা।

ত্রিপুরা কোটায় নিয়োগের জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন লতিবান ইউনিয়নের তিন বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান খগেশ্বর ত্রিপুরা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা‘র বড় ভাই নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা যুবলীগের সভাপতি যতন কুমার ত্রিপুরা এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংষদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি নরোত্তম বৈষ্ণব ত্রিপুরা।

দুই নারী সদস্যের কোটায় আলোচনায় রয়েছেন মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী মহিলালীগের সাধারন সম্পাদক শাহিনা আকতার, জেলা মহিলালীগের বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সদ্য আওয়ামলীগের যোগদানকারী বাশরী মারমা এবং দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শতরুপা চাকমা।

তবে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের তালিকার বাইরে থেকেও আসতে পারেন কেউ কেউ। পার্বত্য চট্টগ্রা জনসংহতি সমিতির মতামত বা পরামর্শও আমলে নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসেবে জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে কোন তালিকা দেয়া হলে তাও বিবেচিত হবে গুরুত্বসহকারেই। এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে নানা মহলের সাথে কথা বলে। তবে এ তালিকায় কে বা কারা থাকতে পারে এমন ধারনা কেউ দিতে পারেনি

তবে কে বা কারা নতুন পরিষদে নিয়োগ পাচ্ছেন তা নির্ভর করছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা‘র আশীর্বাদের উপর। কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবেন সাবেক সাংসদ ও টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং অনেকটা ভূমিকা রাখবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি।

শেষ পর্যন্ত কারা কারা নিয়োগ পাচ্ছেন নতুন পরিষদে আর কারা নিজেদের বাগ্যের চাকা ঘুরাতে নতুন চেয়ারে বসবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নতুন আদেশ সম্বলিত একটি ফ্যাক্স না আসা পর্যন্তই।

Exit mobile version