কালারমারছড়া ইউনিয়নকে ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন’ গড়ে তোলার উদ্যোগ

fec-image

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নকে ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করবেন। গত ২ মার্চ “দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন” তৈরীর নীতিগত অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণায়। এরপর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সকল সরকারি দপ্তরের সমন্বয়ে ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন’ তৈরীর কাজ শুরু হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে জনগণকে উপহার দিতে চায় সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবে প্রায় ৯০ হাজার জনসাধারণ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প নিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এ জন্য ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন’ হিসেবে গড়ে তোলতে সারাদেশের পাঁচটি ইউনিয়নকে মনোনীত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মহেশখালীর কালারমারছড়া।

এরই প্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল ইসলাম সুনিদ্রিষ্ট ১৪টি মতামত উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন’ হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ পেশ করেন। এরপর গত ২ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (পরিকল্পনা-১ শাখা) মোহাম্মদ ওবায়দুল ইসলাম প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘দুর্যোগ সহনশীল মডেল ইউনিয়ন তৈরীর কাজ শুরু করার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হল। পাশাপাশি একটি কর্মশালা আয়োজনের নীতিগত অনুমোদন নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন করা হলো।’

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার মুঠোফোনে বলেন ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রথমবারের মতো এটি পাইলট প্রকল্প। এজন্য কালারমারছড়াসহ পাঁচটি ইউনিয়নকে মনোনীত করা হয়েছে। সরকারি সকল দপ্তরের চাহিদার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। যার সম্পূর্ণ অর্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হবে।’

কালামারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে, গত ২১ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মতামত গ্রহণ করে দ্রুত কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য একটি সভার আয়োজন করার নির্দেশনা পেয়েছি। উক্ত সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন। আশা করছি খুব শীঘ্রই এটি বাস্তবায়ন হবে।’

এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আশা করি দ্রুত সময়ে সুসংবাদ পাবে মহেশখালীর মানুষ।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইতিমধ্যে প্রাথমিক ধাপের কাজ শুরু করেছি। শীঘ্রই ইউনিয়নের সমস্ত মানুষের অংশগ্রহণে একটা সভা করব। সভায় স্থানীয় জনগণই বলবে, তাদের ঝুঁকিগুলো কি কি। সেই অনুপাতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে ওয়ার্ড ভিত্তিক ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হবে। তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক জনগণের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক সরকারি দপ্তর খানা জরিপ করবেন। স্থানীয় জনগণ তাদের চাহিদার কথা জানাতে পারবেন। সে মোতাবেক সেটির সমাধান করবেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে এ ক্ষেত্রে তথ্য নির্ভুল হতে হবে। সম্মিলিতভাবে এটিকে বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।’

প্রকল্পে যা থাকছে- এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভিটি উঁচুকরণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাস্তাঘাট নির্মাণ, রাস্তাঘাট এইচবিবি করণ, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ, নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র/মুজিবকিল্লা নির্মাণ, আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ সংস্কার, বজ্রনিরোধক স্থাপন, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রশিক্ষণ দেয়া, দুর্যোগের পূর্বাভাস সংক্রান্ত বিষয়ে সকল ইমাম, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, এনজিও জনপ্রতনিধিসহ সকল শ্রেণী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া ইত্যাদি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, ‘সাগরের প্লাবন ঠেকাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, খাল ও নদীর তীরের বাঁধ উঁচুকরণ, খাল খনন, নদীভাঙন ঠেকাতে সিসি ব্লক জিওব্যাগ বসানো হবে। একই সাথে পুরো ইউনিয়নের দরিদ্র ও ভুমিহীনরা ডাটাবেজের আওতায় আসবে। যারা ভুমিহীন তারা বাড়ি পাবেন। শিক্ষার হার বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো হবে। যারা বেকার তাদের কাজ দেয়া হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এসব বাস্তবায়ন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মোকাবেলা করতে হবে না। এটা সফল হলে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোকে পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নকে মনোনীত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, মহেশখালী কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কালারমারছড়া

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন