parbattanews

২২ বছর পর প্রতিমন্ত্রী পেলো খাগড়াছড়িবাসী

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে ডাক পেলেন খাগড়াছড়ি আসন থেকে টানা তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বুধবার রাতে মন্ত্রী পরিষদ থেকে তাকে ফোন করা হয়।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মন্ত্রিসভার শপথবাক্য পাঠ করাবেন।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলাবাসী প্রায় ২২ বছর পর প্রতিমন্ত্রী পাচ্ছে। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের পরে ১৯৯৮-২০০১ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন খাগড়াছড়ির এমপি কল্পরঞ্জন চাকমা। এরপর রাঙামাটির দীপঙ্কর তালুকদার ও বান্দরবানের বীর বাহাদুর প্রত্যেক্যে টানা ২২ বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলে খাগড়াছড়িবাসীর মধ্যে বঞ্চণার মনোভাব সৃষ্টি হয়। তাই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মন্ত্রী হওয়ায় খাগড়াছড়িবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ১৯৮৯ সালে ‘খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ’-এ সদস্য নির্বাচিত হবার মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় আসেন। এরপর ২০১১ সালে ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’-এর চেয়ারম্যান হন। এরপর দশম সংসদ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতার পরিচয় দিয়ে আসছেন।

২০১৭ সালের শেষ দিকে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি টাস্কফোর্সের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

খাগড়াছড়ির প্রবীণ সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচারিয়া জানান, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বাইরেও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি জেলাজুড়ে শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণে একজন দানশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুখ্যাত।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী করার দাবী দীর্ঘদিনের এমন কথা জানিয়ে খাগাড়ছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, নানা প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করে তিনি বারবার খাগড়াছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি অনেক উদার। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নিজেকে খাগাড়ছড়ির সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উজার করে দিয়েছেন। খাগড়াছড়িতে উন্নয়নসহ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা রেখেছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। সর্বোপরি দীর্ঘদিন ধরে খাগাড়ছড়ি মন্ত্রী বঞ্চিত।কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে খাগাড়ছড়িবাসির দীর্ঘদিনের দাবীর বাস্তবায়ন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সুশীল জীবন ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের মতো খাগড়াছড়ি মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত। নানা কারনে গুরুত্বপূর্ণ খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী করা এখন সময়ের দাবী। তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি সহ অধিকাংশই ইস্যুই খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীক।

খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া বলেন, অপর দুই পার্বত্য জেলার চেয়ে খাগড়াছড়ি জেলার রাজনীতি অনেক বেশি সংবেদনশীল। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বকালীন সময়ে জাতি-ধর্ম এবং দল নির্বিশেষে একটি সুন্দর সহাবস্থান টিকেছিলো। সেই অর্থে তিনি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলে উন্নয়নের ন্যায্যতা এবং সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে খাগড়াছড়ির গুরুত্ব বেশি মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে একই মন্ত্রী থাকাতে উন্নয়ন কর্মকান্ড এক জেলা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর, অস্ত্র সমর্পনসহ সহ নানা কারনে খাগাড়ছড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠনের পর খাগাড়ছীড়র তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্প রঞ্জন চাকমাকে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। এরপর রাঙামাটির এমপি দীপঙ্কর তালুকদার এবং বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর-ই তিন পার্বত্য জেলার বিশেষায়িত এই মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার মানে টানা দুই দশক ধরেই খাগড়াছড়ি থেকে এমপি নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্ব পাননি কেউ-ই। সেদিক থেকে এবার কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী করার দাবী অনেক বেশী জোরালো।

এদিকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে ডাক পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কতৃজ্ঞা জানিয়েছেন জেলার জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাসেম, রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি, মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিুকুল ইসলাম, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন ও গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা ও খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কে এম ইসমাইল হোসেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী পরিষদে স্থান দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞা জানিয়েছেন।

Exit mobile version