parbattanews

কুয়োর পানি পান আর ঝুকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান নিচ্ছে পানছড়ি মুসলিমনগরের শিক্ষার্থীরা

muslim-nagr-pic-copy

পানছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির  ৪নং ওয়ার্ডে রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান মুসলিমনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রত্যন্ত এলাকার এ বিদ্যাপীঠে রয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমনি পাঠদান নিচ্ছে ঝুকিপূর্ণ ভবনের নীচে তেমনি বছরের পর বছর পান করছে কুয়োর বিষাক্ত পানি। এ নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যাথ্যা।

সরেজমিনে মুসলিমনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কোমলমতিদের করুণ দশার চিত্র। বিদ্যালয় শুরুর পূর্বে  একঝাঁক শিক্ষার্থী কলস, জগ ও বোতল নিয়ে ছুটছে পানির সন্ধানে। তাদের পিছন পিছন গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয় থেকে প্রায় আধা কিলো দুরে পাহাড়ের তলদেশে অবস্থিত একটি কুয়ো থেকে বালতিতে রশি বেঁধে পানি তুলছে। ২য় শ্রেণীর  রহিম, ইয়াছমিন, তাহমিন, ৩য় শ্রেণীর রাশেদুল, রাজীব, শারমিন, ৪র্থ শ্রেণীর কামরুন্নাহার, তাজুল, সাহানা, ৫ম শ্রেণীর কনা, বেবী, ফজিলা, নিলু ও রাবিয়া জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে পানির ব্যবস্থা নেই। ফলে সারা বছর এ কুয়োর বিষাক্ত পানি নিয়েই পান করে সবাই। পানির অভাবে বাথরুম পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেনা বলেও জানায়। শিক্ষার্থীর অভিভাবক পারভীন আক্তার, হনুফা বেগম, রৌশনআরা জানায়, কুয়োর পানি পান করে অনেকেই পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানির জন্য গিয়ে পা পিছলে অনেকে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বিদ্যালয়ের পিটিএ সভাপতি মো. শহীদুল্লা খান জানায়, প্রায় ১০/১১ বছর পূর্বে বিদ্যালয়ের পিছনে একটি টিউবওয়েল ছিল যার অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এ বিদ্যালয়ে পানির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টির কথা তিনি জানান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবুল মিয়া জানায়, পানীয় জলের সু-ব্যবস্থায় টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে বহু আবেদন করেছি। এ পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায় নি। পানির অভাবে বিদ্যালয়ের টয়লেট দুটিও প্রায় নষ্টের পথে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে কোন দপ্তরী না থাকায় পাহাড়ী পথ বেয়ে কোমলমতি শিশুরা কুয়ো থেকে কষ্ট করে পানি নিয়ে আসে। ৫নং উল্টাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা জানায়, এ ব্যপারে আমি শুনেছি। পানির সমস্যা সমাধান করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

পানছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম সরকার পার্বত্যনিউজকে জানায়, এ বিদ্যালয়ে পানির ব্যবস্থা নেই তা আমার জানা ছিল না। ইতোমধ্যে একটি চাহিদা পাঠানো হয়েছে। চাহিদাতে এ বিদ্যালয়ের নাম থাকুক বা নাই থাকুক যে কোন প্রকল্প থেকে হোক টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

এ বিদ্যালয়ে শুধু পানীয় জলের সংকট নয় বিদ্যালয় ভবনটিও বেশ ঝুকিপূর্ণ। ভবনের পিছনে কিছু কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। তাছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যালয় নির্মাণকালে  ঢালাইয়ের সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রডের পাশাপাশি বাঁশ বেঁধে ছাঁদ ঢালাই দেয়। যার ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ধ্বসে যে কোন মুহূর্তে দূর্ঘটনা ঘটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Exit mobile version