কেঁচো সারের আয়ে সংসারের চাকা ঘুরে গৃহিণীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:

রাঙামাটি শহরের এক গৃহিনী কেঁচো সার উৎপাদন এবং বিকিকিনি করে সংসারের হাল ধরেছেন। চোখে মুখে তার নানা স্বপ্ন আর উচ্ছাসে ভরপুর। স্বামীর আয়ে সংসারে চলেও ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয়। আর ছেলেদের লেখা-পড়ার বাড়তি খরচের চাহিদা মেটাচ্ছেন কেঁচো সার বিক্রি করে।

যে গৃহিনী এ কাজটি করে সংসারের চাকা ঘুরাচ্ছেন তিনি হলেন- মারজাহান বেগম। স্বামী সরকারি চাকরীজীবী। দু’ছেলে এবং স্বামী নিয়ে তাদের সংসার। বসবাস করেন- জেলা শহরের সিএ অফিস পাড়া এলাকায়। বড় আর ছোট ছেলে দু’জনে ঢাকার একটি সরকারি কলেজে লেখা-পড়া করছেন।

মারজাহান বেগম জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের বিষয়টি তিনি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তারপর স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর থাকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।

একটি সরকারি ব্যাংক থেকে গত বছর ১লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। পাশাপাশি কেঁচো বিক্রি করে বাড়তি আয় করেছেন।

মারজাহান আরও জানান, প্রথমে তার বাড়ির পাশ্ববর্তী একটি স্থান নির্বাচন করে কেঁচো সার (বার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন শুরু করেন। আর প্রতিমাসে আয় করছেন ২০হাজার টাকা।

তিনি বলেন, কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য প্রথমে কাঁচা গোবর, মুরগীর পচা বিষ্টা, বিষমুক্ত সবুজ লতা-পাতা, তরকারির খোসা, ফলের খোসা এবং কলা গাছের কুচি দরকার হয়। আর বার্মি কম্পোস্ট তৈরির মূল উপাদান অস্ট্রেলিয়ান এজোজিক কেঁচো সংগ্রহ করতে হবে। এ কেঁচোগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন-স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা থেকে। তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্বামী। পাশাপাশি কাজের লোকও রাখা হয়েছে।

এর আগে সিমেন্টের তৈরি রিং (গোলাকার), জায়গা এবং ঘর তৈরির জন্য টিন, বাশ, কাঠ, পেরেক লাগবে। অবশ্যই মেঝে পাকা হওয়া দরকার। মেঝে পাকা থাকলে পিপড়ারা কেচোঁর উপর আক্রমণ করতে পারবে না। কেচো উৎপাদনের স্থানটি অবশ্যই ছায়াযুক্ত স্থানে হতে হবে।

গৃহিনী বলেন, নতুন অবস্থায় সার উৎপাদনের জন্য ৪৫দিনের সময়ের দরকার হয়। এরপর প্রতিমাসে সার তোলা যাবে।

মারজাহান আরও বলেন, অল্প পরিমাণ জায়গায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। কেঁচো সার বিকিকিনি করে টানা-পোড়নের সংসারের দু:খ এবার ঘুচে গেছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেজায় সুখে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বাকী টাকা দিয়ে নার্সারী, হাঁসের খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে বলে যোগ করেন।

সার ক্রয় করার ক্রেতা কারা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় চাষীরা খুচরা এবং পাইকারী দামে বাড়ি থেকে সার কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বড় বড় সারের দোকানগুলো পাইকারী দামে বাড়িতে এসে সার সংগ্রহ করছে।

গৃহিনী জানান, পরিশ্রম ছাড়া কোন পেশায় সফল হওয়া যায় না। এজন্য মনযোগ দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা দরকার। তাহলে পরিশ্রম ফল হিসেবে সফলতা ধরা দিবে। অভাব ঘুঁচে যাবে এক নিমেষে। এজন্য তিনি বেকার যুবক-যুবতীদের এ চাষে উদ্বুদ্ধ হতে আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া জানান, যে কোন বেকার যুবক অল্প জায়গায় স্বল্প টাকা দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করতে পারে। অধিক ফসল উৎপাদনে এ সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেউ কেঁচো সার উৎপাদন করতে চাইলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাকে সাহায্য করবে। গৃহিনী মারজাহান বেগম একটি দৃষ্টান্ত উদাহরণ বলে যোগ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেঁচো সারের আয়ে সংসারের চাকা ঘুরে গৃহিণীর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন