parbattanews

কেএনএফ বাইরের সৃষ্টি – ক্য শৈ হ্লা

পার্বত্যনিউজ সম্পাদককে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা

পার্বতনিউজ: সম্প্রীতির বান্দরবান কেমন আছে?

ক্য শৈ হ্লা: বান্দরবান তো খুব ভালো ছিল। ভালো থাকতে চাই, যেহেতু পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে বান্দরবানে ১১টি সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে যার যার সংস্কৃতি,ভাষা আলাদা। সম্প্রীতির এক বান্দরবান ছিল। আমরা নিজেদেরকে সেভাবেই তুলে ধরি। যেহেতু বাংলাদেশের মতো এতে পাহাড়-পর্বত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ১১টি জাতি যেমন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, ম্রো, খুমিসহ সব জাতি আমাদের এখানে বসবাস করে। প্রথাগতভাবে যার যার অবস্থান যার যার এলাকায়, মৌজায়- হেডম্যান, কারবারি, যার যার সীমানায়; বাঙালি সম্প্রদায় নিয়ে সুন্দরভাবে বসবাস করি। আমরা ব্রিটিশ আমলের আগে থেকে বসবাস করে আসছি।

পার্বত্যনিউজ: আপনি বলেছেন, সম্প্রীতির বান্দরবান ছিল। আপনি কী এখনো সম্প্রীতির বান্দরবানকে সম্প্রীতির বান্দরবান দেখেন, না সেখানে কোন বিচ্যুতি দেখেন?

ক্য শৈ হ্লা: সম্প্রীতি এখনো আছে। আমরা ধারবাহিকতা রাখার জন্য চেষ্টা করছি। ছোট-খাটে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাতে সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে সেটা বলা যাবে না। আমরা সবাই চাই সম্প্রীতি থাকুক, তবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাদের (কেএনএফ) দাবি দাবা নিয়ে নতুনভাবে সশস্ত্র গ্রুপ হয়েছে। শান্তিচুক্তির পরে দল বদলসহ অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু বান্দরবান জেলায় যে আলাদাভাবে একটা সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের (কেএনএফ) দাবিদাওয়া নিয়ে একটা সশস্ত্র গ্রুপ হয়েছে। যেহেতু এখানে ১১টা জাতি রয়েছে। সেখানে একটা জাতি, একটা গ্রুপ নিয়ে তারা লড়াই করছে। এদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে  বান্দরবানবাসী খুব আতঙ্কিত ছিলাম। যার কারণে খুবই স্বাভাবিক যে, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সেটাকে (জঙ্গি) নিমূল করবে। করতে গিয়ে অনেক অঘটন হয়তো ঘটেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষের অনেকে মারা গেছেন এবং তারাও (কেএনএফ) মারা গেছেন। সেখানে শুধু একটা না সম্প্রদায়। যার কারণে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে এ (শান্তি কমিটি গঠন) উদ্যোগটা নিলাম। বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং নেতৃবৃন্দকে নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগ নেওয়ার পরে তারা হয়তো প্রস্তাব দিয়েছে যে, হ্যাঁ আপনাকে একটা উদ্যোগ নিতে হবে যার কারণে আমি উদ্যোগ নিলাম। পরে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাকে জানাই, তারা কতটুকু আমাদের সাহায্য করতে পারবে। সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে পরবর্তীতে কীভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়, এটার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম।

পার্বত্যনিউজ: আপনার কেন মনে হয় এই সম্প্রীতির ব্যত্যয় ঘটলো?

ক্য শৈ হ্লা: এটা বলা খুব কঠিন। আমার ধারণা, যেহেতু এখানে বর্ডার। তারা সুযোগ নিতে পারে। আমার ধারণা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার, ভারতের মিজোরামে তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে। স্পষ্ট যদি বলা হয়, ১১টি জাতির পরে কুকি তাদের গোষ্ঠী হিসেবে জো এবং কুকি তাদের অস্তিত্ব ইমার্জ করছে। ওদিকে চিন স্টেট এবং মিজোরাম আছে। তাদের সাথে মোটামুটি ট্রেনিং নিয়েছে এ খবরও শোনা গেছে। ভৌগলিক অবস্থানগত বেল্টটাকে নিয়ে তারা আলাদা হতে চাচ্ছে। আলাদাভাবে রাঙামাটি, বান্দরবানের ২-৩টা উপজেলাসহ ৭ উপজেলাকে নিয়ে তাদের আন্দোলন। যেহেতু গণতান্ত্রিকভাবে নয়, সরাসরি সশস্ত্র হিসেবে তারা সৃষ্টি হয়েছে। তাই উদ্বেগটা সৃষ্টি হয়েছে।

পার্বত্যনিউজ: এতোকাল পরে কেএনএফের সৃষ্টির কারণ কী মনে হয়? এই বর্ডার তো আগেও ছিল, চিন স্টেট, মিজোরাম নতুন হয়নি?

ক্য শৈ হ্লা: প্রথমে রেজিস্টার্ড একটি সামাজিক সংগঠন ছিল। সবাই তাদের সাহায্য করেছি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে তাদের সাহায্য করা স্বাভাবিক। পরবর্তীতে এরা সশস্ত্র কোন হলো, আগে কোন পরিকল্পনা ছিল কী না, থাকলে কীভাবে ছিল- গবেষণার ব্যাপার। পার্বত্য গবেষক হিসেবে এটা আপনি ভাল বলতে পারবেন। যেহেতু তারা কুকি জনগোষ্ঠী দাবি করেছে। কুকিরা মিজোরাম ও মনিপুরে আছে। মিয়ানমারেও কিছু কুকি জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের সাথে তারা আত্মীয়। তাদের এই মিল কীভাবে হয়েছে সেটা হয়তো আপনারা যারা রিচার্স করেন, তারা হয়তো জানবেন। এটাতো স্বাভাবিক, যেহেতু এখানে একটা জাতি গোষ্ঠী আছে বাঙালি। আমরাতো বাংলাদেশের নাগরিক। পাকিস্তান স্বাধীন হলো। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর তা থেকে একটা সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো। ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তান হলো, তখন আমরা একই সীমানায় ছিলাম। স্বাধীন হওয়ার পর আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভৌগলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার প্রয়োজন। সরকার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। শান্তিচুক্তির পরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। শুধু একট সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়া না, সবাই তো পিছিয়ে পড়া। আস্তে আস্তে সরকার চাচ্ছে সেখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ তৈরি করতে।

পার্বত্যনিউজ: তারা (কেএনএফ) যে বলছে, শান্তি চুক্তিতে দেওয়া সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বড় তিনটা জনগোষ্ঠী যেভাবে এগিয়েছে, কিন্তু তারা যে ছয়টি জনগোষ্ঠীর কথা বলছে তারা সেটা পায়নি। তারা বঞ্চিত হয়েছে। এটা তাদের একটা অভিযোগ। আপনি এটাকে কতটুকু সঠিক মনে করেন?

ক্য শৈ হ্লা: অভিযোগ যদি হয়,তাহলে বলব সেটা ঠিক নয়। যদি তাদের দাবি বলা হয়, তাহলে ঠিক আছে। অভিযোগ হলেতো পিছিয়ে পড়বে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যদিও বিভিন্ন সময় আমরাও দাবিদাওয়া করি। সবাইতো দাবিদাওয়া করছে। যেহেতু এখানে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে চলে আসতে হবে। সেভাবে দাবিদাওয়া করতে হবে, সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন প্রজেক্ট তো দিচ্ছে। যেহেতু পাহাড় এলাকা, অন্যান্য জাতিগুলো হয়তো সমতল ভূমিতে থাকে। স্বাভাবিক তারা হয়তে এগিয়ে আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাড়াও সকল ক্ষেত্রে। পাহাড় পর্বতে রাস্তা, স্কুল-কলেজ করা কঠিন হয়ে যায়। এখনতো পাহাড়ে স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট হচ্ছে। আপনারাতে দেখেছেন, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা হচ্ছে, বর্ডার রোড হচ্ছে। সবকিছু হচ্ছে। এখন মাত্র শুরু হয়েছে।

পার্বত্যনিউজ: ওদের (কেএনএফের) যে দাবি পিছিয়ে পড়া- আপনি কী তা গ্রহণ করছেন না?

ক্য শৈ হ্লা: পিছিয়ে পড়াতো অবশ্যই। যেহেতু তারা পাহাড় পর্বতে থাকে, জুম চাষি। আমাদের কালচার জুমের কালচার। স্কুল-কলেজ ছিল না। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছি ঠিকই। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলেতো এতো উন্নয়ন হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন হয়েছে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি হওয়ার পরে। তাহলে কত পিছিয়ে ছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত অনেক বছর।

পার্বত্যনিউজ: কেএনএফ সৃষ্টির পেছনে বহির্বিশ্বের কোন ইন্ধন কাজ করছে কি? আপনি কী মনে করেন?

ক্য শৈ হ্লা: ধরে নেয়া যায়। তা না হলে ট্রেনিং কোথা থেকে পায়। তার ট্রেনিং পেয়েছে চিন স্টেট থেকে। তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) তারাইতো নিয়ে গেছে তাদের। ওরা মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্মড গ্রুপ- স্বাধীনতাকামী, কুকি চীনকে ওখানে ট্রেনিং দিয়েছে। তাহলে বোঝা যায় কোথা থেকে এসেছে। ওখানোতো এমএনএফ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এমএনএফ এর সাথে ইন্ডিয়ার চুক্তি হওয়ার আগেই এই বেল্টে তারা (মিজো) ছিল। তাদের সাথে আত্মীয়স্বজন আছে। আত্মীয়স্বজন থাকলে তাদের সাথে সেটেল হবে। ওই শক্তিতে তারা হয়তো একটা কাজ করেছে। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জোরাম থাঙ্গা। বর্তমানে তিনি মিজোরামের সাবেক চিফ মিনিস্টার। এটা আমার কথা না, তাদের নেতৃবৃন্দের কথা। বম সম্প্রদায় যারা আছে তাদের নেতৃবৃন্দের কথা। তাদের কথা জোরাম থাঙ্গা যদি চাপ দেয় এখানে মীমাংসা হবে। এমন কথাবার্তা তাদের কাছ থেকে আসছে। তাহলে এটাকে ধরে নেওয়া যায় নিশ্চয়ই তিনি তাদের একটা অভিভাবকের মতো কাজ করে।

পার্বত্যনিউজ: অর্থাৎ আপনি যেটা বললেন, ওরা বলছে যে মিজোরামের সাবেক চিফ মিনিস্টার জোরাম থাঙ্গা যদি চাপ দেয়, তিনি যদি চান কেএনএফ সমস্যা সমাধান হতে পারে?

ক্য শৈ হ্লা: এটা তাদের বক্তব্য। এটা আমার বক্তব্য না। হতেই পারে, স্বাভাবিক যেহেতু ভৌগলিক অবস্থা দেখে বলছি। দেখলেই বোঝা যায়, তারা ভৌগলিক ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাহাড়-পর্বত এলাকা, এক দিকে মিয়ানমার, এক দিকে মিজোরাম।

পার্বত্যনিউজ: এটা কি কেএনএফের নেতারা আপনাদেরকে বলেছে?

ক্য শৈ হ্লা: না। এটা বম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ যারা আছে তাদের বক্তব্য। তাদের সাথে তো লাইন আছে। আশ্রয় নেয়, ওখানে স্টেটের আওতায় অথবা মিজোরামের আওতায় তারা তো আছে। বর্ডারে তাদের বক্তব্য তো তাই। তারা তো ওখান থেকে এসেছে।

পার্বত্যনিউজ: যে উদ্যোগটা আপনি নিয়েছেন এটা কি আপনি স্বপ্রনোদিত হয়ে নিয়েছেন? না সরকারের পক্ষ থেকে আপনাকে অনুরোধ করা হয়েছে?

ক্য শৈ হ্লা: না না। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন অনুরোধ করা হয়নি। স্বপ্রনোদিতভাবেই নিয়েছি। আমরা চিন্তা করলাম যে, এভাবে তো চলে না। যেহেতু পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে, অনেকটা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে রুমা রোয়াংছড়ি, থানচি তিনটা উপজেলা। বান্দরবানে আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এখানে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সব হাহাকার হয়ে যাবে। হোটেল-মোটেল, গাড়ি-ঘোড়া- এগুলো সবার সাথে সম্পৃক্ত। পর্যটক মানে একক না, সবকিছুতে সম্পৃক্ত ছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। তাদেরও (কেএনএফ)মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে, এ পক্ষেরও লঙ্ঘন হতে পারে। শুধু একটা জাতি না, সব জাতির ওপর কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে। বাঙালিসহ সবার জন্য। যার কারণে এভাবে থাকা যাবে না। সেজন্য আমি উদ্যোগ নিলাম। যার কারণে সব সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে আমি বসলাম, সবাই সায় দিলে। তখন আমরা একটা কমিটি গঠন করলাম। কমিটি গঠন করার পরে তাদের সাথে আলাপ করলাম। সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সাথে আলাপ করলাম। সবাই খুব প্রশংসা করেছে। তারা বলে খুব ভালো উদ্যোগ।তখন তাদের সাথে একটা লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়, যোগাযোগ করার জন্য। তারাও কিন্তু চেয়েছে আলোচনা করার জন্য।

পার্বত্যনিউজ: যুদ্ধরত একটা গ্রুপকে অর্থাৎ কেএনএফকে ট্রাস্টের জায়গায় আনলেন কী করে?

ক্য শৈ হ্লা: বম স্যোশাল ফ্রন্ট আছে। তাদের (কেএনএফ) মুরব্বি সংগঠন। যেহেতু তাদের জনসংখ্যা কম। তাদের নেতৃবৃন্দের সাথে অনেকবার বৈঠক হয়েছে। তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তারা লিয়াঁজো করবে। তাদের যেন বিশ্বাস হয় তাদের সাথে যোগাযোগ করার পর সম্পূর্ণ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটা অনেক কঠিন ব্যাপার ছিলো। এখানে তাদেরও নিরাপত্তার বিষয়, আমাদেরও নিরাপত্তার বিষয়। সেনাবাহিনীকে অনেক রিকুয়েস্ট করা হয়েছে। সেনাবাহিনীও নিরাপত্তা দিচ্ছে। প্রথমে অনেকবারতো অনলাইনে করা হয়েছে। স্বশরীরে না হতো তো জিনিসটা বুঝবে না, অবিশ্বাসে জড়াবে। পরে সরাসরি পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারাতো আমাদের ভাই, আমাদের এলাকার সন্তান। বার বার বলার পর তারা স্বশরীরে প্রথম বৈঠকে এসেছে।

পার্বত্যনিউজ: আপনিতো বললেন ৬টি জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু আমরা তো দেখছি যারা লড়াই করছে তারা সবাই বম? এটা কি ৬টি জাতিগোষ্ঠী প্রতিনিধিত্ব করছে, না শুধু বমদের প্রতিনিধিত্ব করছে?

ক্য শৈ হ্লা: তারা দাবি করে ৩টা জাতি গোষ্ঠী। ক্ন্তিু আপনি বলছেন তারা বম সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা দাবিদাওয়া নিয়ে ৪টি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে।

পার্বত্যনিউজ: কোন ৪টা গোষ্ঠী?

ক্য শৈ হ্লা: বম, খুমি, ম্রো, খিয়াং।

পার্বত্যনিউজ: কিন্ত আমরা শুধু বমদের দেখতে পাচ্ছি, বাকিরা কোথায়?

ক্য শৈ হ্লা: জানিনা। বাকিরা নেই মনে হয়। দুই একজন হয়ত বিয়ে সাদী করেছে। সশস্ত্র সংগ্রামে তারা নেই।

পার্বত্যনিউজ: আপনি কি তাদের জিজ্ঞাসা করেছেন তারা কেএনএফের সাথে আছে কি না?

ক্য শৈ হ্লা: তারাইতো আমাদের শান্তি কমিটিতে আছে। তাদের নেতৃবৃন্দ আছে। তারা বলেছে তাদের নাম বিক্রি করা দুঃখজনক। এটাতো খুব বিপদজনক। তারা বলছে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে তারা নাই। শুধু বমরা আছে।

পার্বত্যনিউজ: বৈঠকে কেএনএফের প্রতিনিধি দলে শুধু বমদের দেখেছি। আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেননি আপনারা যে ৬ জাতি বা ৪ জাতির কথা বলছেন, তাহলে বাকি জাতির প্রতিনিধি কেন কমিটিতে নেই?

ক্য শৈ হ্লা: আমরা ওদিকে যায় নাই। কারণ ওদিকে গেলে আবার তর্কাতর্কি হবে। যেহেতু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি শান্তির জন্য। আমরাতো জানি এখানে নাই। ২/১ জন থাকলেও থাকতে পারে। যেহেতু জাতি নাই, জাতির সাপোর্টও নাই। আমরা জানি এজন্য এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন নাই। মূল বিষয় হলো, যারা অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে, অথবা দুই পক্ষের যখন লড়াই হয় তখন ভয়ে চলে গেছে, তাদেরকে কীভাবে আবার ফিরিয়ে আনা যায়। যেহেতু এখন জুম চাষের সময়, সেজন্য তাদের পুর্নবাসন করা। তারা কীভাবে বাড়ি ফিরবে তা নিশ্চিত করা। সকলের শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা। না হলেতো খুব কষ্টকর অবস্থা। অনেকেই তো পার্শ্ববর্তী মিজোরামে চলে গেছে। তাদের কীভাবে আনা যায় আমরা সেভাবে উদ্যোগ নিচ্ছি। মিজোরামে যারা গিয়েছে তাদের এখনো সবাইকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে।

পার্বত্যনিউজ: যখন আপনারা কেএনএফের সাথে সরাসরি বসলেন তাদের শান্তির ব্যাপারে তাদের মনোভাবটা কেমন ছিল?

ক্য শৈ হ্লা: প্রথমে আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী এবং হাসি খুশি করতে পেরেছি। ওরাও আন্তরিক এবং আমরাও আন্তরিক ছিলাম। তাদের দাবি ছিল গত ডিসেম্বর মাসে বড় দিনের আগে আরো একটা (বৈঠক) হওয়ার কথা। এই হিসেবে আমরাও তাদের দাবি গ্রহণ করেছিলাম।

পার্বত্যনিউজ: আপনারা কী জানতে চেয়েছেন, তারা জঙ্গীদের সাথে নিজেদের জড়ালো কেন?

ক্য শৈ হ্লা: না, এই প্রসঙ্গে আমরা যাইনি। যেহেতু এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জড়িত। আমরা শুধু বম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বলেছিলাম জঙ্গি কিন্তু পাহাড়ের বদনাম। সারা বিশ্বের কাছে বদনাম। সেখানে পার্বত্য এলাকায় জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া শুধু বমদের জন্য নয়, আমাদের জন্য, সারা পার্বত্যবাসীর জন্য খুবই দুঃখকর, লজ্জাকর। যেহেতু পার্শ্ববতী দেশে এবং সারা বিশ্বে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। যেহেতু এলাকাটি জঙ্গল ও অভয়ারণ্য। বম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরদের বার বার বললাম, তাদের সেখানে আশ্রয় না দেওয়া এবং সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জঙ্গিদেরকে সেনাবাহিনী উচ্ছেদ করেছে।

পার্বত্যনিউজ: কেএনএফের প্রধান দাবিগুলো কী কী?

ক্য শৈ হ্লা পুর্নবাসন করা, চিকিৎসা দেয়া, স্কুল-কলেজ উন্নয়ন করা এবং তাদের শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা। তবে তাদের মূল দাবি তারা ওই অঞ্চলে একটা আলাদা স্টেট চাচ্ছে। তাদের দাবিদাবাগুলো স্বাভাবিকভাবে আমাদের মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যদিও এটা সরকারের বিষয়, এটা আমরা স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে পারবনা। এটা সরাসরি কেন্দ্রের সরকারের সাথে তাদের থাকবে। এখানে জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের সম্পর্ক থাকবে না। এই ধরণের দাবিদাওয়া দিয়েছে।

পার্বত্যনিউজ: কেন মেনে নেয়া সম্ভব নয়?

ক্য শৈ হ্লা: এটাতো সবার কাছে অবাস্তব মনে হয়। কারণ এটা নিয়ে আবার সমস্যা হবে। কারণ এই এলাকাগুলোতে কেবল একটা সম্প্রদায় বসবাস করে না। সকল সম্প্রদায় আছে। সেখানে তারা একা স্টেট গঠন করবে, বাকিরা মেনে নেবে না। তাছাড়া এটাতো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য নিরাপদ না।

পার্বত্যনিউজ: বাংলাদেশের সার্বমৌমত্ব কীভাবে অনিরাপদ মনে হয়?

ক্য শৈ হ্লা: একটা বর্ডার আলাদা হবে, উপজেলায়-উপজেলায় অন্য জাতি আছে। তারা তো এ দাবী দাওয়ার সাথে একমত নয়। তারা কোথায় যাবে?

পার্বত্যনিউজ: আপনি খুব একটা ভাল কথা বলেছেন, তারা যে ৬-৭টি উপজেলা দাবি করছে। সেখানেতো অন্য জাতি আছে। এমনকি ওই অঞ্চলে তাদের থেকে চাকমাদের সংখ্যা আরো বেশি। ৬টা উপজেলার মধ্যে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের জনসংখ্যা তাদের থেকে কয়েকগুন। তারা কোথায় যাবে?

পার্বত্যনিউজ: যেখানে শান্তিচুক্তি বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড, আঞ্চলিক পরিষদ, মন্ত্রণালয় রয়েছে। সেখানে কেএনএফের সাথে যদি আবার আলাদা চুক্তি করতে হয়, সেটা কি শান্তিচুক্তির সাংঘর্ষিক হতে পারে?

ক্য শৈ হ্লা: অবশ্যই। হিল ট্র্যাক্টের জন্য তো শান্তি চুক্তি হয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো জনসংহতি সমিতির সাথে যদি চুক্তি হতে পারে, তাহলে আমাদের (কেএনএফ) সাথে পারবে না কেন? এই ধরনের বক্তব্য তাদের।

পার্বত্যনিউজ: তাহলে শান্তি চুক্তি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় এটা কিভাবে হতে পারে? আপনারা যে আলোচনা করছেন এ আলোচনাটা ফলপ্রসূ কীভাবে হতে পারে?

ক্য শৈ হ্লা: আমরা ওদিকে যায়নি। চুক্তি বা অন্য কিছুতে আমরা যাইনি। ৪/৫টা বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। এখানে কারো যেন ক্ষতি না হয় তাদেরকে যেন আমরা আনতে পারি। তারা যেন ফিরে আসে এটুকুই। সেখানে তারা যেহেতু শুধু বম জাতি নয়, সেখানে মারমা জাতি আছে, বিভিন্ন জাতি আছে। সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় আছে। না বলা অনেক বিষয় আছে। এগুলো না হওয়ার জন্য আমরা এই কমিটিতে কাজ করছি। বাদবাকি সরকার দেখবে।

পার্বত্যনিউজ: কেএনএফের মধ্যে কোনো বিভাজন দেখেছেন কীনা?

ক্য শৈ হ্লা: যেহেতু আমি জানিনা, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

পার্বত্যনিউজ: নাথান বমের সাথে কথা বলেছেন? তার মনোভাব কেমন?

ক্য শৈ হ্লা: প্রথম মুখোমুখি বৈঠকের আগে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে আসতে পারেনি, হয়তো আগামীতে আসবে। সে কথা দিয়েছে, আমি বললাম আসলে তো ভালো হয়। পরে প্রতিনিধিদের পাঠাল। ভাইস প্রেসিডেন্টকে পাঠালো। যেহেতু পরিচিত ছেলে, এখানকার ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছে। মনোভাব সুন্দর, কথাবার্তা খুব আন্তরিক। বসার জন্য আন্তরিক।

পার্বত্যনিউজ: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ক্য শৈ হ্লা: আপনাকেও ধন্যবাদ, পার্বত্যনিউজের পাঠকদের ধন্যবাদ।

Exit mobile version