‘কেন আ’লীগ নেতাকর্মীরা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের টার্গেট’
বান্দরবানের রাজবিলায় একের পর এক খুনের ঘটনা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এই অবস্থায় বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নকে নিরাপদ মনে করছেন না স্থানীয়রা। জেলা শহরের কাছে একের পর এক কিলিং মিশন চলে আসলেও প্রকৃত দোষী কাউকে এখনো পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। যার কারণে এই নিয়ে খোদ সরকার দলের নেতাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলটি ইতোপূর্বে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে সর্বশেষ মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা চিউংকিউ পাড়া এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে মংসিউ মারমা (৩৬) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে। জেলা সদর থেকে আনুমানিক ১৫কি:মি দূরে রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা। আর সেই বাজার থেকে আরো এক কি:মি দূরে চিংকিউপাড়ায় বাসায় ঢুকে ওই যুবলীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বাঘমারা বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে চিংকিউপাড়ায় হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় পাড়াবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। পরে মংসিউ মারমাকে তাঁর বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য অং প্রু মারমা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে তাঁকে উপর্যুপরি তিনটি গুলি করেছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানে মারা যান।
এর আগে গত ৭ জুলাই রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজারপাড়ায় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের তিন শীর্ষ নেতাসহ ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এমএন লারমা এ হত্যাকান্ডে জনসংহতি সমিতির মূল দলকে দায়ী করে।
তবে মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ কর্মী মংসিউ মারমা হত্যার ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই হত্যাকান্ডের জন্য জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে জেলা শহরে বিক্ষোভ করেছে।
জেলা শহরের মুক্তমঞ্চ এলাকায় সমাবেশে বক্তারা বলেন- বান্দরবান কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়। কেন এখানে একের পর এক হত্যাকান্ড হচ্ছে এবং সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা যুবলীগ কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভায় তারা আরো বলেন- বাঘমারা এলাকার মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিনা কারণে একের পর এক হত্যাকান্ড চালাচ্ছে সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা। সন্তু লারমা চোর, তিনি সন্ত্রাসী তাই পাহাড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এই ঘটনা ঘটনাচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনী মন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যার্থ হলে আওয়ামী লীগ বৈঠকের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
জেলা যুবলীগ আহবায়ক ক্য লু মং মারমার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষী পদ দাশ, ক্যা সা প্রু, মোজাম্মেল হক বাহাদুর, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাদেক হোসেন চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি পাইহ্লা অং মং, পৌর আওয়ামীগ সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, শ্রমিক লীগ সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কৃষক লীগ নেতা পাপন বড়ুয়া, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার সোহাগ।
এদিকে সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত মংসিউ মারমা (৩৬) এর লাশ মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ঘটনাস্থল বাঘমারায় সেনা ও পুলিশের নিয়মিত টহল আরো জোরদার করা হয়েছে বলে আইন শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
বান্দরবান সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মংসিউ মারমা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এটি পরিকল্পিত হত্যা। লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে, তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মামলা হওয়ার পর তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।