parbattanews

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ২ বছরের অনিশ্চিত বাস

রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যূষিত রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের ২ বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে এখনো তৈরী হয়নি স্থিতিশীল পরিবেশ। উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩৪টি শরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধাধি গ্রহণ করে থাকলেও এভাবে অনিশ্চিত ভাসমান অবস্থায় তারা দীর্ঘদিন ধরে থাকতে চান না।

মঙ্গলবার কুতুপালং সর্ববৃহত্তম আশ্রয় শিবির ঘুরে সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা হলে তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন। গত বছরের ২৫ আগষ্ট রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩১টি সেনা চাউনিতে সেদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলা চালালে মাঝখানে বলির পাঁঠা হয়ে দাড়ায় মুসলিম রোহিঙ্গারা। ওই ঘটনার জের ধরে মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সেনা, বিজিপি ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকেরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশুর উপর বর্বরোচিত নৃশংসতা শুরু করে। প্রাণ বাচাঁতে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা।

রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাদের ভয়াবহ নির্মমতার ২ বছর পার হয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের কোন প্রকার সহানূভূতি নেই দাবী করেন রোহিঙ্গা নেতা ডাঃ ফয়সাল আনোয়ার।

বালুখালী ক্যাম্পের হামিদ উল্লাহ জানায়, মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য কালক্ষেপণ করছে। আসলে আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয় কি না সন্দেহ রয়েছে। আমাদের বসত-ভিটা, সহায় সম্বল ফেলে আসার কারণে এখানে কিছুই ভাল লাগেনা। আরো কতদিন এখানে এভাবে অনিশ্চিয়তার মাঝে থাকতে হয় জানিনা।

রাখাইন রাজ্যে মংডুর প্রত্যন্ত জনপদ চাইদাথং এলাকার বাসিন্দা আহমদ নুর (৩৮) জানায়, রাখাইনে কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আমরা মিয়ানমারে চলে যাব। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা। বাংলাদেশ সরকার আমাদেরকে আশ্রয় এবং খাবার দিয়ে খুবই ভাল রাখলেও কিন্তু আমার মনটা সারাক্ষণ নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের দিকে। অধীর অপেক্ষায় আছি কখন ফিরতে পারব নিজ দেশে।

বলীবাজার এলাকার বাসিন্দা রুহুর আলম (৩৪) জানায়, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জমি ও বাড়ি ভিটায় সেনা ক্যাম্প করছে। রাখাইনদের বাড়ি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে ভবিষ্যতে কোনদিন যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যায়, তাহলে তারা বাপ দাদার বাড়ি ভিটার অস্থিত্ব খোঁজে পাবেনা। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কামনা করছি।

কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানায়, তাদের ক্যাম্পে নতুন পুরাতন মিলে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। নতুন যারা এসেছে তারা খুবই কষ্টে আছে। যেহেতু ছোট্ট কুড়ে ঘরে পলিথিনের ছাউনির নিচে ছেলে/মেয়ে নিয়ে গাদাগাদি করে প্রচন্ড খরতাপে বসবাস অত্যান্ত কষ্টকর পীড়াদায়ক হয়েছে। তাছাড়া সামনের বর্ষায় এসব রোহিঙ্গারা কোথায় গিয়ে নিশ্চিত বসবাস করবে তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬৭৩ পরিবারে ৮০৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করেছে। মিয়ানমার ওই তালিকা যাছাই-বাছাই করে ৩৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে দিনক্ষণ ঠিক করলেও বিভিন্ন জটিলতার কারনে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দ্রুত প্রত্যাবাসনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Exit mobile version