parbattanews

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক,বান্দরবান:

১২টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি নানা আয়োজনে মধ্যে দিয়ে বান্দরবানে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করছে। তবে আদিবাসী হিসাবে আত্মপরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় নিজেদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসকারী চাকমা, মারমা, খুমী, ম্রো, চাক, বম, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা ইত্যাদি।

এসব সম্প্রদায়কে কেউ বলছে অদিবাসী, আবার কেউ বলছে উপজাতি। তবে সরকার দিয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি। কিন্তু এ পরিচয় মানতে নারাজ এসব সম্প্রদায়ের জন-সাধারন। তাদের একটাই দাবি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে নয়, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি এমনটা জানালেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সমর্থিত ভূমি অধিকার আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক জুমলিয়ান আমলাই।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর উপজাতিয় জাতিগোষ্ঠীগুলো সরকারের কাছে আদিবাসী স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ২০১১ সালে ওইসব জাতিগোষ্ঠীকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী হিসেবে নয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তবে ওই স্বীকৃতি মানতে নারাজ এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। তাদের দাবি, নিজ নিজ জাতি হিসেবে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি, জাতিগত পরিচয় অন্তর্ভুক্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাংবিধানিক নিশ্চয়তা, প্রথাগত ভূমির অধিকার ও উপজাতি শরনার্থীদের পুর্ণবাসন।

জেএসএস’র নেতাকর্মীরা জানায়, অনেকে মনে করছেন জেএসএস আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য থেকে দুরে সরে গেছে। এতে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাশীল দলের নেতারা বলছে, সরকার সংবিধানের পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজ নিজ ভাষাগত পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষায় পড়ালেখা করার সুযোগও। কিন্তু তারপরও হতাশ এসব জনগোষ্ঠী। মানতে নারাজ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নামের পরিচয়।

মানবাধিকার কর্মী ডলাই প্রু নেলী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, ভূমি সমস্যা, জীবনের অধিকার দাবি জানিয়ে আসছি। এসব বিষয় নিয়ে সরকার যেভাবে কাজ করছেন এতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা খুশি।

জেএসএস সমর্থিত ভূমি অধিকার আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক জুমলিয়ান আমলাই বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা আদিবাসী। স্বীকৃতির দাবি আন্দোলন সরকার গুরুত্ব না দিলেও আজ হোক বা কাল হোক আমরা আদায় করেই নিবো।

জেলা পরিষদ সদস্য ও গবেষক চিংইয়ং ম্রো বলেন, স্বাধীনতার দুই বছর পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলে জেএসএস’র নেতাকর্মীরা অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে আসলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধনের সময়কাল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে দাবি জানিয়ে আসছে।

অন্যদিকে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা আদিবাসী নয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাঙালী সংগঠনগুলো। তারা বলেন, আদিবাসী স্বীকৃতি দাবীর আড়ালে রাষ্ট্র বরোধী ষড়যন্ত্রের করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতারা।

বুধবার সকালে নানা আয়োজনে আদিবাসীদের শিক্ষা,ভুমি ও জীবনের অধিকার এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বান্দরবানে পালিত হয়েছে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস। পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ থেকে একটি র‌্যালী শহর প্রদক্ষিণ করে সেখানেই এসে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কয়েক’শ নারী-পুরুষ অংশ নেন।

পরে রাজবাড়ি মাঠে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি লেলুং খুমীর সভাপতিত্বে রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াই চিং মারমা, বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক জুয়াম লিয়ান আমলাই, জেএসএস নেতা উছোমং মার্মা,বান্দরবান জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী উবাথোয়াই মার্মা, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অং চ মং, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াইচিং প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পাহাড়িদের অস্বিত্ত টিকিয়ে রাখার জন্য ২০১০ সাল থেকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) উদ্যোগে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের স্বীকৃতি দাবির জন্য আদিবাসী দিবসটি তিন পার্বত্য জেলায় পালন করে আসছে।

Exit mobile version