parbattanews

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন: কাপেং

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সোমবার(১০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কাপেং ফাউন্ডেশন।

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের উদ্যোগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হয়। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো যথাযথ মর্যাদায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করে আসছে। চলতি বছর ৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে।

মানবাধিকার সুরক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশে দেশে আজও মানবাধিকার হুমকির মুখে রয়েছে। বিশেষ করে দেশে দেশে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী জাতিসমূহের মানবাধিকার সবচেয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ সরকার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিলেও সামগ্রিকভাবে এদের মানবাধিকারের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও হুমকির মধ্যে রয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীরা সরকার দ্বারাই নির্যাতিত এমন অভিযোগ তুলে বিভিন্ন তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর উপর প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়ে চলেছে।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী অধিকার কর্মীদের অবৈধ গ্রেফতার ও অমানবিক নির্যাতন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী নারী ও শিশু ধর্ষণ, প্রভাবশালী মহল কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী গ্রামের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর প্রায়ই উঠে আসে।

২০১৭ সালের ২ জুন লংগদুতে তিনটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী গ্রামের আড়াই শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত হয়নি।

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে বাগদা-ফার্মে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাঁওতালদের উপর পুলিশী হামলায় তিনজন সাঁওতাল নিহত ও ১২০০ পরিবারের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের ঘটনায় কোনো সুবিচার হয়নি। উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর উপর হামলা ও উচ্ছেদের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। গত সপ্তাহে পিরোজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে জনৈক আব্দুস সালাম কর্তৃক দুই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাঁওতাল নারীকে উচ্ছেদের ঘটনা হচ্ছে সর্বশেষ ঘটনা। সরকারের একতরফা রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণার ফলে মধুপুরের গারো ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ভূমিদুস্যদের জবরদখলের মুখে সিলেটে অনেক খাসিপুঞ্জী উচ্ছেদের মুখে রয়েছে এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী পান চাষ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ভূমি বেদখলের ফলে উপকূল অঞ্চলে রাখাইন জনগোষ্ঠীর শত শত গ্রাম উচ্ছেদ হয়ে পড়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন নারী ও শিশু যৌন হয়রানি, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর শেরপুরে ৭ম শ্রেণির এক গারো ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী প্রতিবেশি রকি মিয়া (২২) কর্তৃক অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার, ২৬ নভেম্বর মধুপুরে জনৈক আল-আমিন কর্তৃক এক গারো শিশুকে ধর্ষণ; ২৭ নভেম্বর বান্দরবানে এক প্রতিবন্ধী তঞ্চঙ্গ্যা নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা; ২২ আগস্ট লামায় ১৪ ও ১৭ বছরের দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ, ৫ আগস্ট লংগদুতে বাক-প্রতিবন্ধী চাকমা নারীকে ধর্ষণ, ২৯ জুলাই দীঘিনালায় ৫ম শ্রেণির এক ত্রিপুরা ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা ইত্যাদি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর উপর নির্যাতর কারীদের বিচার হচ্ছেনা অভিযোগ করে বলা হয়, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর উপর ক্রমবর্ধমান হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, এসব ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের একপ্রকার দায়মুক্তির ফলে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি আজ নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকারী ও ভূমি বেদখলকারী ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দেয়ার জন্য বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের বার বার দাবি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদলসহ কোনো রাজনৈতিক দলই এক্ষেত্রে জোরালোভাবে এগিয়ে আসেনি। অথচ বাংলাদেশ সরকার অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে, যার বদৌলতে দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী জাতিসমূহের মানবাধিকার সুরক্ষা, পরিপূরণ ও ত্বরান্বিতকরণে সরকার দায়বদ্ধ।

বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ অর্জনে বদ্ধপরিকর। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়নে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমের সাথে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

Exit mobile version