parbattanews

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ঋতুভেদে এ দেশে জন্মে নানা রকম শাক–সবজি। তার মধ্যে শীতকাল সবজি চাষের উৎকৃষ্ট সময়। কৃষিতে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজে মোড়া বাঁধাকপি ও ফুলকপির সমারোহ চোখ জুড়িয়ে দেয়। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের সময়োপযোগী পরামর্শ এবং কৃষকদের নিরলস পরিশ্রমে চলতি মৌসুমে ফুলকপির বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এই ব্যস্ততা স্থানীয় অর্থনীতিতে এনেছে নতুন উদ্দীপনা। কৃষকরা সরাসরি এর সুফল পাচ্ছেন—বাড়ছে আয়, বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ করা হয়। হেক্টরপ্রতি ২৮ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৭০০ মেট্রিক টন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও সমপরিমাণ জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপির আবাদে হেক্টরপ্রতি ৩০ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন হয় ৯০০ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও একই পরিমাণ জমিতে বাঁধাকপি আবাদ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর বাঁধাকপির উৎপাদনও প্রত্যাশার তুলনায় বেশি হতে পারে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার চড়পাড়া, নতুন পাড়া, চৌধুরীঘাট, ওয়াছু, তাইন্দং, বড়নাল, তবলছড়ি, গোমতী ও গড়াগড়িয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ হয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি।

উপজেলার নতুন পাড়া ও ওয়াছু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। পাতার ভাঁজে লুকিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। সারি সারি কপির সমারোহ মন ভরিয়ে দেয়। সবুজের মাঝে বিকেলের রোদমাখা মনোরম দৃশ্য আরও মোহনীয় লাগে।

এদিকে মাঠপর্যায়ে সাফল্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে উঠে এসেছে মাটিরাঙ্গার ওয়াছু এলাকার কৃষক আবু তাহেরের উদ্যোগ। তিনি ১ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করে দেড় লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। সঠিক ফলন হলে প্রায় ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রির আশা করছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় তার আবাদে ভালো ফলনের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গোমতী এলাকার কৃষক হক সাহেব লাভের স্বপ্ন নিয়ে আশাবাদী হলেও কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ফলন ভালো হলেও সার–কীটনাশকের দাম বাড়ছে। অসময়ের বৃষ্টির ঝুঁকিও থাকে। তবু পরিশ্রম করে চাষ করেছি। এখন মাঠভরা ফসল দেখে সব কষ্ট ভুলে যাই। পরিবহন খরচ কমালে কৃষকদের লাভ আরও বাড়ত।”

তাইন্দং ইউনিয়নের কৃষক মনু মিয়া বলেন, “এবার বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়ায় আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আগাম কপি তোলায় ভালো সাড়া মিলছে। প্রতি পিস ফুলকপি–বাঁধাকপি যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে পুঁজি উঠে লাভও থাকবে। ন্যায্য মূল্য পেলে আমরা আরও উৎসাহ নিয়ে পরের বছর চাষ করব।”

মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি এলাকার কৃষক কবির হোসেন বলেন, “গত কয়েক বছর লোকসান হলেও এবার ফলন অসাধারণ হয়েছে। উন্নত বীজ ও সারের ব্যবহারেই এ সাফল্য। গত বছরের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ লাভের আশা করছি। ইতোমধ্যে প্রথম চালান ভালো দামে বিক্রি করেছি। ফুলকপি ও বাঁধাকপি আমাদের পরিবারের বড় একটি খরচ নির্বাহ করে।”

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতকালীন কপি চাষ মাটিরাঙ্গার গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফসল পরিচর্যা, উত্তোলন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বহু কৃষিশ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সেলিম রানা বলেন, “কৃষকদের শুরু থেকেই উন্নত জাতের বীজ, সুষম সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই দমন এবং মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছি। এ বছর আবহাওয়া কপি চাষের জন্য খুবই অনুকূল। ফলে আবাদ ভালো হয়েছে এবং ফলনও আশাব্যঞ্জক। আশা করছি, এবার ফুলকপি ও অন্যান্য শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন। এতে কৃষকের আর্থিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে।”

Exit mobile version