খাগড়াছড়িতে আ’লীগের সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব
আর মাত্র এক দিন পর আগামী ২৪ নভেম্বর(রবিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু কাঙ্খিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন। খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম প্রাাঙ্গণে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
খাগড়াছড়ি শহর ছেয়ে গেছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অর্ধ ডজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীর ছবিসহ তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে। পাশাপাশি রয়েছে সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন। সম্মেলনের শেষ মুহুর্তে এসে পাণ্টা-পাল্টি সাংবাদিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে পেশী শক্তির কোন স্থান থাকছে না বলে জানিয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একে এম এনামুল হক শামীম এমপি, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য দিপঙ্কর তালুকদার, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
এদিকে শেষ মুহুর্তে এসে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সম্মেলন ও কাউন্সিলে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চাইথো অং মারমা সম্মেলন ও কাউন্সিলে পেশী শক্তির কোন স্থান থাকছে না বলে সাফ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর এ কাউন্সিল ও সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উৎসব উদ্দীপনা রয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এ কাউন্সিল উৎসবে পরিণত হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, জেলার ৯টি উপজেলা ও একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার ২০৮ জন কাউন্সিলারসহ জেলার হাজারও নেতাকর্মীর অংশ গ্রহণে সবার একটি সফল কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ, ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। প্রায় তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে সভাপতি ও জাহেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন পায়। কিন্তু নানা ইস্যুতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ বিরোধ পৌঁছে যায় তৃণমূল পর্যন্ত। শুরু হয় আলাদা কর্মসূচি পালন, পাল্টি-পাল্টি হামলা-মামলা। দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত তিন ডজন পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়। এমন কি প্রাণহানির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। এরই জের ধরে ২০১৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত সম্পদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্মলেন্দু চৌধুরীকে। সম্মেলনকে সামনে সে পুরনো বিরোধ আবার দেখা দিয়েছে।
আসন্ন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগে সম্মেলনে সভাপতি পদে একক ভাবে বর্তমান জেলা সভাপতি ও ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপিসহ তিন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক পদ প্রত্যাশির নাম শোনা যাচ্ছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, সাংগঠনিক আ: জব্বার, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র সামছুল হক ও দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাসেম।
এদিকে সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২১ নভেম্বর) বিকালে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা নিজেকে আসন্ন জেলা আ’লীগের সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী দাবি করে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রণিত তালিকা প্রত্যাখান করে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ত্যাগী নেতাদের দলচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। সমীর দত্ত চাকমা স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। তারই প্রতিবাদে জেলার জেলার ৯ উপজেলা এবং ৩ পৌরসভার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে।
তার একদিন পর শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল বানচাল করতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা গং ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ৯ উপজেলা এবং পৌরসভার আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সমীর দত্ত চাকমাকে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ইউপিডিএফ’র এজেন্ট দাবি করে তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়।