parbattanews

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র খুচরা আয় মাসিক ৪ কোটি টাকা: উৎস চাঁদাবাজী

কতা্

বিশেষ প্রতিনিধি::

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি ইউনিটে চাঁদাবাজীর মাধ্যমে খুচরা খাত থেকে মাসিক আয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের অন্তগর্ত প্রায় ৫টি সাব ডিভিশন থেকে এ বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায় হয়ে থাকে। এছাড়াও ইউপিডিএফ’র আলাদা বার্ষিক চাঁদা শত কোটি টাকার উপরে।

চাঁদাবাজীর মাধ্যমে আয় হলেও তা ব্যয়ে ইউপিডিএফ’র বেশ কিছু কর্মীবান্ধব কর্মসূচী রয়েছে যা অনেককে বিস্মিত করেছে। ইউপিডিএফ’র রয়েছে কর্মী ভাতা,পরিবার ভাতা ও শিক্ষা ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, বিবাহ ভাতা ইত্যাদি। আবার চাঁদা টাকা ব্যয়ে কোন নেতা-কর্মী অনিয়ম বা দূর্নীতি করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইউপিডিএফ’র সামরিক শাখার প্রধান প্রদীপন খীসা‘র বাড়ি থেকে যৌথবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার সাথে প্রাপ্ত প্রায় দুই বস্তা নথিপত্র ঘেঁটে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

উদ্ধার হওয়া নথির তথ্য মতে, খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের আওতায় ইউপিডিএফ’র বেশ কয়েকটি ডিভিশন ও সাব ডিভিশন রয়েছে। ডিভিশনগুলো হচ্ছে, সুবর্ণপুর ডিভিশন( সাংগঠনিক নাম) ও রত্নপুর ডিভিশন।খাগড়াছড়ি জেলায় ইউপিডিএফ’র সাব ডিভিশনগুলো হচ্ছে, তৃণভূমি সাব ডিভিশন(সাংগঠনিক নাম), বকুল তলা সাব ডিভিশন, বটতলা সাব ডিভিশন ও পূর্ণ মিশন সাব ডিভিশন। প্রতিটি সাব ডিভিশনের মাসে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় হয়ে থাকে।

এ সব ডিভিশনের দায়িত্বে আছেন একজন প্রধান, একজন সেক্রেটারী ও একজন কো-অডিনেটর। ঐ এলাকায় উত্তোলিত চাঁদা সাংগঠনিক কাজে খরচের পর মাস শেষে কো-অডিনেটর কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগের প্রধান(সিসি) কাছে প্রেরণ করে থাকেন। ইউপিডিএফ’র আদায়কৃত অর্থের হিসেব তদারকির জন্য রয়েছে আলাদা শৃঙ্খলা তদারকি বিভাগ সিসি। রয়েছে মিশন হাইয়ার পরিচালক পোষ্ট। ইউপিডিএফ আয়-ব্যয়ের হিসাব খুবই নিখুঁতভাবে করে থাকে।

প্রাপ্ত নথির তথ্য অনুযায়ি, প্রতিটি সাব ডিভিশন সাধারণত,বাজার ডাক, বাশেঁর গাড়ী ট্যাক্স ও পাস, গাছের গাড়ীর ট্যাক্স ও পাস, পারমিট, পারমিটের গাছ-বাশেঁর ট্যাক্স, ঠিকাদারী গাছ-বাশেঁর ট্যাক্স, কাচাঁমাল রয়েলটি, কাচাঁমাল ট্যাক্স, গাড়ীর পাস, ব্যবসার পাস, সিএনজি পাস, গাছ কলা পাস, ধান,হলুদ, জোত কাচাঁমাল পাস, জোত পারমিট, জোত পারমিট ঠিকাদার পাস, বিভিন্ন ফরেষ্ট অফিস ট্যাক্স, রাস্তা নির্মাণ, প্রকল্প, অটো রিকসা পাস, অটো ব্যবসা পাস, রাইলক পাস, বাজারে গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির ট্যাক্স ইত্যাদি।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, মাসিক খুচরা চাঁদার পাশাপাশি ইউপিডিএফ’র প্রতিটি সেক্টরে মোটা অংকের বাৎসরিক চাঁদা রয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন খাত, বিভিন্ন তামাক কোম্পানী, মোবাইল কোম্পানী, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ কোম্পানী “স” মিল ও চাকুরিজীবিদের কাছ থেকে ইউপিডিএফ বার্ষিক চাঁদা আদায় করে থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবস ও উৎসব উপলক্ষে আলাদা চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে। এ টাকা নিয়মিত মাসিক আদায়কৃত ৪ কোটি টাকার বাইরে।

এ দিকে চাঁদাবাজির পাশাপাশি বেশ কিছু কর্মীবান্ধব কর্মসূচীও রয়েছে ইউপিডিএফ’র। ইউপিডিএফ’র প্রতিটি কর্মী পদ অনুযায়ি ভাতা পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিবাহিত হলে পরিবার ভাতা পেয়ে থাকে। অবিবাহিতরা বিবাহের সময় বিবাহভাতা পেয়ে থাকে।

ইউপিডিএফের কোনো কর্মী বিবাহ করতে চাইলে পাত্রীর বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করে পার্টির কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। পার্টি সবকিছু পরীক্ষা করে অনুমতি দিলে তিনি বিবাহ করতে পারেন। সেই সাথে বিশেষ বিবাহ ভাতাও দেয়া হয়।

প্রতিটি ইউপিডিএফ কর্মীর পরিবারও নিয়মিত ভাতা, কেউ অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা খরচ ও তাদের পরিবারের শিক্ষার্থীরও ভাতা পেয়ে থাকে। সন্তান প্রতি ভাতা হেরফের হয়। সন্তানের শিক্ষা পর্যায় অনুযায়ীও ভাতা কমবেশী রয়েছে। এ ছাড়াও বার্ষিক এককালীন বই, পোশাক ও শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় ভাতাও দেয়া হয়। তবে ইউপিডিএফ’র কোন নেতাকর্মী আর্থিক অনিয়ম-দূর্নীতি করলে কঠোর বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রতিটি গ্রামে কতটি পরিবার, কতজন সদস্য ও সদস্যা রয়েছেন, তারা কে কি করেন, তাদের পারিবারিক অবস্থার বিস্তারিত তথ্যও ইউপিডিএফ’র কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সকল ব্যবস্থা দেখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সংগঠক উজ্জল স্মৃতি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা ও কেন্দ্রীয় প্রচার শাখার প্রধান নিরন চাকমার মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, ৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যৌথ বাহিনীর পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ ইউপিডিএফ’র সামরিক শাখার প্রধান প্রদীপন খীসা‘র বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা ও দুই বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রদীপন খাীসার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

Exit mobile version