পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ বহিষ্কার ১০, কয়েক ইউপিতে বহিরাগত প্রার্থী

খাগড়াছড়িতে ইউপি নির্বাচনে আ’লীগে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের বন্যা

fec-image

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ঘর সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বহিষ্কারের বন্যা বইয়ে দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নামানো যাচ্ছে না। ফলে দিন দিন বহিষ্কারের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে।

এ পর্যন্ত পাঁচ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১০ আওয়ামী লীগের নেতাকে বহিষ্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আবার কয়েকটি ইউপিতে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা ও বহিরাগতদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল কাসেমের  পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিনকে সোমবার (৮ নভেম্বর) বহিষ্কার করা হয়।

এর আগে আরো পাঁচ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে চার আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

গত ৪ নভেম্বর মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. হুমায়ুন কবীর (আনারস), মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও বড়নাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. ইলিয়াছ (চশমা), গোমতি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. ফারুক হোসেন লিটন (আনারস) ও বেলছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. মামুন মিয়া (আনারস)।খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল দলীয় প্যাডে স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে গুমতি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. ফারুক আহাম্মদ লিটন বলেন, ‘ফেসবুকে দেখেছি আমাকেসহ চার প্রার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও হাতে কোনও চিঠি পাইনি।’

এর আগে মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জমির আলী ভুইয়া ছাড়াও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর অভিযোগে চার আওয়ামী লীগ নেতাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অপর দিকে জেলার গুইমারা উপজেলার সিন্দকছড়ি ইউনিয়নে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের নেতা রেদাক চাকমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ইউপি নির্বাচনে নৌক প্রতীকের প্রার্থী পরাজিত করে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচত হন রেদাক চাকমা।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর রেদাক চাকমা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বিগত দিনে তার কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক ছিল। তাই তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে দীঘিনালা উপজেলার দলের ত্যাগী নেতাকে বঞ্চিত করে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বারেক’কে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কবাখালি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন গত ২৯ অক্টোবর সকালে নিজ বাসভাবনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন কবাখালি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন।

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুল বারেক আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা-নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০১৪ সালে দীঘিনালায় নির্বাচন বানচালে গঠিত সংগ্রাম কমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন। অথচ দলের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে অনুপ্রেবেশকারীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন তিনি।

এসময় তিনি আব্দুল বারেকের মনোনয়ন বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের দাবি জানান। মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক সুভাস চাকমা ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিলেও তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যা আওয়ামী যুবলীগের দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শে তাদেরকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন