খাগড়াছড়িতে ‘গণতান্ত্রিক’ ধারায় ছাত্রলীগের নতুন পথচলা

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
১৯৮৮ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের পথচলা শুরুর প্রায় ২৮ বছরের মাথায় সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ধারায় নতুন পথচলা শুরু করলো খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগ। আর এ নতুন পথচলায় ‘ইতিহাসের অংশ’ হয়ে গেলো এ প্রথম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সভাপতি টিকো চাকমা আর সাধারণ সম্পাদক মো: জহির উদ্দিন ফিরোজ। আর এ ইতিহাসের ‘প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী’ হয়ে রইলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ. এম বদিউজ্জামান সোহাগ। খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের নতুন পথচলার ‘কারিগর’ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা মো: দিদারুল আলম।

খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের প্রায় ২৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করা হলো। খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের ৬ষ্ঠ কমিটির প্রথম নির্বাচিত নেতা হিসেবে নিজেদের নাম লেখালেন টিকো চাকমা এবং মো: জহির উদ্দিন ফিরোজ।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব কোন প্রক্রিয়ায় আসছে তা নিয়ে ধোয়াশা ছিল। ইলেকশন নাকি সিলেকশন এমন আলোচনায় মুখর ছিল। তবে শুরু থেকেই সাবেক ছাত্রনেতা এবং ছাত্রলীগের কাউন্সিলর ও প্রার্থীরা নির্বাচনের পক্ষে অনঢ় ছিল।

প্রথম অধিবেশনের শেষদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ. এম বদিউজ্জামান সোহাগ বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বলেন, সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু করার আহবান জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন দেয়ার দাবিতে শ্লোগান দেয়। একপর্যায়ে সবধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ‘র কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ. এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে নেতা নির্বাচন করেন আট উপজেলার নেতাকর্মীরা। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এ নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। টিকো চাকমা ১শ’ ৯৬ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে মংসাপ্রু মারমা ৬৯ ভোট পেয়ে নিকটতম স্থান লাভ করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২শ’ ১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মো: জহির উদ্দিন ফিরোজ। এ পদে বাপ্পী চৌধুৃরী পেয়েছেন ৭০ ভোট।

নির্বাচনের ফলাফলের পরপরই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ. এম বদিউজ্জামান সোহাগ নবনির্বাচিত কমিটির সহ-সভাপতি, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে যথাক্রমে আমির হোসেন ও আলোক প্রদীপ চাকমা। সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে বাপ্পী চৌধুরী ও ফাহিম হাসান খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কিশোর ত্রিপুরা।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগে গণতান্ত্রিক চর্চাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে এটা খাগড়াছড়ির ছাত্ররাজনীতির জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচনের ফলে সুস্থ রাজনীতির চর্চা হবে বলেও মনে করেন তারা। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ছাত্রলীগের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক ধারা সুচিত হয়েছে তা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও অনুসরনের আহবান জানান।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা মো: দিদারুল আলম  সূচিত এ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা দীর্ঘদিনের চলে আসা নিয়মের বাইরে এসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচনের যে পথ রচিত হলো তা খাগাড়াছড়ির ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে ইতিহাস হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দলে জবাবদিহীতা নিশ্চিত হবে বলেও মনে করেন সাবে এ ছাত্রনেতা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন