parbattanews

খাগড়াছড়িতে চলছে উপজাতীয় সংগঠনগুলোর বৈসাবী চাঁদাবাজি

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

তিন পার্বত্য জেলার সরকারী চাকুরীজীবি-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ উপজাতীয় বিভিন্ন স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজিতে যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তখন এ চাঁদাবাজিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘বৈসাবী’ চাঁদাবাজি। ইতিমধ্যে ‘বৈসাবী’ উদযাপনকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদে শুরু হয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

সম্প্রতি তিন পাহাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধি ও ব্যবাসায়ী থেকে শুরু করে সাধারন কৃষকদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায়ের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চাঁদাবাজির তালিকা থেকে বাদ পড়েননি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বা শিক্ষক সমাজও। ‘বৈসাবী’ উৎসব উদযাপনে সরকারী সহায়তা থাকলেও এ দিবসকে সামনে রেখে ইউপিডিএফ-জেএসএস সহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু করে এ উৎসব চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত । আর সে লক্ষকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চললেও চাঁদা দাতাদের কেউই মুখ খুলতে রাজি নয়। তারা নিরবে চাঁদা দিয়ে নিরাপদ থাকতে চাইছে।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ব্যাবসায়ী বলেন, এখানে কখনোই বিনা চাঁদাদানে ব্যবসা-বানিজ্য করা যায় না। যেকোন সময় যেকোন উপলক্ষকে সামনে রেখেই পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা যে যার মতো করে চাঁদাবাজিতে নামে। তার মতে, এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হলে প্রথমেই তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। তাদের সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে তাদেরকে আাইনের আওতায় হবে।

‘বৈসাবী’ উদযাপন কমিটির নামে ব্যক্তি বিশেষে দুই হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চাঁদার অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙ্গালী বিদ্বেষী প্রচারণা ও তাদের অস্ত্র ভান্ডারকে সম্বৃদ্ধ করবে চাঁদার অর্থ দিয়ে এমনটাই ধারনা পাহাড়ের সচেতন মহলের। তাদের মতে একটি দিবসের নামে চাঁদাবাজি সরকার ও প্রশাসনের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরূপ।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার এক জনপ্রতিনিধি নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সপ্তাহ খানে আগ থেকেই ‘বৈসাবী’র চাঁদাবাজির চিঠি আসতে শুরু করেছে। দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবী করা হয়েছে এসব চিঠিতে। তিনি বলেন, তারা শুধু চিঠি পাঠিয়েই থেমে যায়নি, ফোন করে দ্রুত দাবীকৃত চাঁদা পরিশোধের জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ চাঁদাবাজির মাধ্যমে পাহাড়ের এ জনপদকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য বানানোর কাজ চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কোথায় আছি। নতুন বছরকে সামনে রেখে তারা যেভাবে চাঁদার জন্য প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি। তবে বৈসাবীকে সামনে রেখে যাদের কাছে চাঁদা দাবী করা হচ্ছে তারা কেউই প্রশাসন বা নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে নারাজ।

তাদের মতে, অভিযোগ করে কোন ফল আসেনা। উল্টো বিপদের সম্ভাবনাই বেশী থাকে। আর তাই কোন অভিযোগ করে কেউ বিপদ ডেকে আনতে রাজি নয়। এবিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈসাবী উৎসবকে সামনে রেখে, বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নিাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশী চালানো হচ্ছে। তবে তিনি চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগের কমতি নেই দাবী করে চাঁদাবাজি বন্ধে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

খাগড়াছড়িতে নিরাপত্তাবাহিনীর বিভিন্ন সূত্র বৈসাবী উপলক্ষে ব্যাপক চাঁদাবাজীর কথা পার্বত্যনিউজের কাছে স্বীকার করেছে। তবে তাদের মতে, যেহেতু বর্তমানে চাঁদাবাজ বিরোধী অপারেশন চলছে সে কারণে খাগড়াছড়িতে এবছর চাঁদাবাজরা দোকানে দোকোনে এসে প্রকাশ্যে চাঁদা চাইতে পারছে না। ফলে দুর থেকে ফোন করে, স্লিপ পাঠিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু খাগড়াছড়ি নয়, তিন পার্বত্য জেলার সর্বত্রই বৈসাবীর নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। শুক্রবার রোয়াংছড়িতে এক বাঙালী দোকানে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বৈসাবী উপলক্ষে চাঁদা দিতে দেরী হওয়ায় এক বাঙালী ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর করেছে এবং তাকে মেরে আহত করেছে।

ছবি: পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজির ফাইল ছবি

Exit mobile version