parbattanews

খাগড়াছড়িতে জনপ্রতিনিধিসহ চারজনের বিরুদ্ধে দু’দকের তদন্ত শুরু

 

চাকুরি প্রলোভন দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে খাগড়াছড়িতে জনপ্রতিনিধিসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক)তদন্ত শুরু হয়েছে।

অভিযোগকৃতরা হলেন, জেলার গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি রানী ত্রিপুরা, গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি এলাকার নির্মল ত্রিপুরার স্ত্রী রুমি ত্রিপুরা এবং একই এলাকার বিজয় মোহন ধামাইয়ের স্ত্রী শিরিন বালা ত্রিপুরা।

দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আওয়ালের পাঠানো আদেশে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করছেন অতিরিক্ত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে কমিশন। এদিকে দুদকের পদক্ষেপে অভিযুক্তরা এখন আপোষ মীমাংসার জন্য প্রতিদিন অভিযোগকারীর দরজায় কড়া নাড়ছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার গুইমারা ইউনিয়নের বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার বাসিন্দা সির লক্ষী ত্রিপুরার ছেলে সজিব ত্রিপুরা (২১) একজন চাকরি প্রার্থী ছিলেন। তার চাকরির জন্য এলাকার শিরিন বালা ও গুইমারা উপজেলার চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমাসহ একাধিকবার তৎকালীন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি রানী ত্রিপুরার বাসায় গেলে সজিবকে এনজিওতে ভালো বেতনের চাকরির কথা বলে ২ লাখ ৭০ হাজার ঘুষ দাবী করে বিউটি রানী।

ছেলের চাকরির জন্য ঘুষের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে সির লক্ষী এক লাখ টাকায় সেগুন বাগান, স্বর্ণ ও গয়না বিক্রি করে সজিবের বাবা ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর এক লাখ টাকা বিউটি রানীর হাতে তুলে দেন। পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আরও এক লাখসহ মোট দুই লাখ টাকা ঘুষ দেন বিউটি রানীকে।

সির লক্ষ্মী তার অভিযোগে উল্লেখ করে, বিউটি রানী প্রথমে গোল্ডেন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলফমেন্ট ফাইন্ডেশন নামে একটি এনজিওর নিয়োগপত্র এনে দেন সজিবকে। নিয়োগপত্রে সজিবকে সংস্থাটি গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের “অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউনিয়ন অফিসার” পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া ৮ হাজার ও প্রশিক্ষণ শেষে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়।

সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক মো. রওশানুল আলম ও উপ-পরিচালক মো. গোলাম রসুল স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রে আরও বলায় হয়, সজিবকে ২০১৮ সালের ৬ থেকে ৯ মে’র মধ্যে রাঙামাটি কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়। কিন্তু সজিব রাঙামাটি গিয়ে গোল্ডেন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে কোনও সংস্থা খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আছে।

বিষয়টি নিয়ে সির লক্ষ্মী তার ছেলে সজিব ও শিরিন বালা ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি রানীর সঙ্গে ফের যোগাযোগ করেন। পরে বিউটি রানী লেডফোর্স সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে সংস্থার ডাইরেক্টর হিউম্যান রিসোর্স স্বাক্ষরিত আরেকটি নিয়োগপত্র সজিবকে দেন। এই নিয়োগপত্রে সজিবকে এমএলএসএস পদে নিয়োগ এবং মাসিক বেতন ১১ হাজার ২০০ টাকা ধরা হলেও কবে, কোথায় এবং কখন যোগদান করতে হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না। পরবর্তিতে বিউটি রানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটি ৭০ হাজার টাকা চেয়েছেন বলেন তিনি। সেই টাকা না দেওয়ায় সজিবের চাকরি এখনও আটকে আছে বলে বলা হয়।

জানা যায়, এ নিয়ে সজিবের মা সির লক্ষী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু সাথে সাথে বউটি রানী, উশ্যেপ্রু মারমা, শিরিন বালা এবং রুমি ত্রিপুরা ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন সির লক্ষ্মীকে।

গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা চাকুরির জন্য টাকা লেনদেন হয়েছে স্বীকার করে বলেন, আমি বিষয়টি জানি। তবে আমি কোন টাকা গ্রহণ করেনি। বিউটি রানী ত্রিপুরার বিরুদ্ধে এ ধরনের আরো বহু অভিযোগ আছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি রানী ত্রিপুরার  মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

একটি সূত্র জানায়, সির লক্ষ্মী ত্রিপুরার আবেদনের প্রেক্ষিতে দূর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল (অর্থ ও হিসাব) গত ১ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেন এবং চিঠি প্রাপ্তি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম গত ২ মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবুল হাশেমকে অভিযোগ তদন্তের নিয়োগ করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।

অতিরিক্ত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবুল হাশেম তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তদন্ত কতটুকু গড়িয়েছে, তা বলতে রাজি হননি।

Exit mobile version