parbattanews

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

তিন পার্বত্য জেলায় নারী ধর্ষন, ধর্ষনের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরাম ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের আয়োজনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (১৮মে) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সম্মুখে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের যুগ্ম-সদস্য সচিব আঞ্জুমান আক্তার প্রিয়ার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিংকি বড়ুয়া।

মানববন্ধনে খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় দিন দিন নারী ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী এবং কৈশোরীরা পথে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতেও নিরাপদ নয়। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি এবং সঠিক বিচার না হওয়ায় ধর্ষণের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের জোর দাবি জানান তিনি।

সীমা মারমা বলেন, ঐ এলাকায় ধর্ষণসহ পাহাড়ে নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিশেষভাবে পার্বত্য এলাকাতেই পাহাড়ী নারীদের নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

উইমেন রিসোর্স এর পক্ষ থেকে স্বপ্না চাকমা বলেন, ধর্ষণের হার সমতলের সাথে মিলিয়ে দেখলে,পাহাড়ে যে এমন ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশে অন্যান্য এলাকার মতই একই চিত্র সেখানে। সারাদেশেই পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের সহকারী-সদস্য সচিব আঞ্জুমান আক্তার লাকি বলেন, আজকাল ধর্ষণ একটা ধারাবাহিক ঘটনা হয়ে গেছে। প্রতিদিন ফেইসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের খবর চোখে ভাসে। আমার মনে হয় ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত না করলে ধর্ষণমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব না। ধর্ষকদের কঠিন শাস্তির জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা স্বজনপ্রীতির দরূণ যেন কোন ধর্ষক রেহাই না পায় সে বিষয়ে সর্বসাধারণের সচেতন হওয়া দরকার এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই একত্রিত হয়ে ধর্ষণকারীদের প্রতিহত এবং প্রতিরোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এর বিরুদ্ধে স্লোগান তুলি আমাদের পরিবার থেকেই। সরকারের কাছে ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে পাথর মেরে নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড বা পাবলিক প্লেসে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড করার জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে কোন পুরুষ আর নারীদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকানোর সুযোগ না পায়। নতুবা আজ অন্যের মা-বোন ধর্ষিতা হবে কিন্তু কাল-পরশু আমার বোনও ধর্ষিতা হতে পারে। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ না করি। সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্ষকদের মোকাবেলা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক গৌরী মালা ত্রিপুরা, ডালিয়া ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, তথ্য প্রচার সম্পাদক খোকন বিকাশ ত্রিপুরাসহ শত শত নারী-পুরুষ এবং গণ্যমাধ্যম কর্মীরা।

মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত আকারে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব হয়ে জেলা শহরের অফিসার্স ক্লাবে এসে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে যে দাবিসমূহ পেশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো:
১.অবিলম্বে যৌন হয়রানি, ধর্ষণের চেষ্টা ও ধর্ষনের ঘটনায় জড়িত সকল দোষীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।
২.ধর্ষণের চেষ্টা ও ধর্ষণের শিকার পরিবারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৩.এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা।

তথ্যমতে, ঘটনা ১, গত ১০ মে রাঙ্গামাটি সাজেক পর্যটন এলাকায় রায়হান (২৭), পিতা:মো. হাসান কর্তৃক এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে সামাজিক বিচারের নামে অভিযুক্ত ও ভিকটিমকে জরিমানা অভিযোগ ওঠে। যা পরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে স্থানীয়দের মাঝে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ঘটনা -২. গত ১২ মে খাগড়াছড়ি রামগড় উপজেলাধীন থানাচন্দ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বেলায়েত হোসেন (৪২) কর্তৃক ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ঘটনার পরপরে অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। বর্তমানে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।

ঘটনা-৩.গত ১৩ মে রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে শান্তিনগর এলাকায় বাজার করতে আসার সময় এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে এবং কাউকে বললে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে ছাড়া পেয়ে মেয়েটি থানায় গিয়ে সোহেল মিয়া (২৯), পিতা: মো. রুস্তম আলী ও মো. আজিম উদ্দীন (২৯), পিতা: জমের উদ্দিন নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৮,১৪/০৫/২০২২। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করেন।

ঘটনা-৪. গত ১৪ মে বান্দরবানে মো. ফরহাদ চৌধুরী (২৯) নামে এক যুবক ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক প্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণ করে। অভিযুক্ত ফরহাদ চৌধুরী বান্দরবান সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের লেমুঝিরি পাড়ার বাসিন্দা। পরে ১৬ মে থানায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিকালে ধর্ষক ফরহাদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনা-৫. গত ১৫ মে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে তবলছড়ি ওয়াপদা কলোনি এলাকায় ফিরোজ (১৭) নামে এক যুবক ১৩ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এলাকাবাসী টের পেয়ে ধর্ষণচেষ্টাকারী ফিরোজকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে শিশুটির মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

Exit mobile version