parbattanews

খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তীব্র শিক্ষক সংকট, ২৭ প্রতিষ্ঠানে দুই শিক্ষকে চলে পাঠদান

খাগড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকট চলছে। মাত্র ২ জন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে ২৭টি বিদ্যালয়। এছাড়া ৪৫৭টি সহকারী শিক্ষকের পদ ও ২৯৪টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মামলার কারণে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুরো জেলায় দুই শিক্ষক দিয়ে চলা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৭টি। মানিকছড়িতে দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলা বিদ্যালয়ের সংখ্যা রয়ছে অন্তত ৭টি। এছাড়া লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৫টি, দীঘিনালায় ৫টি, পানছড়িতে ৩টি, মাটিরাঙায় ৪ ও রামগড়ে ৩টি বিদ্যালয় রয়েছে দুই করে শিক্ষক।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরের ভূদং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১০ জন। মানিকছড়ি উপজেলার দুর্গম এই বিদ্যালয়ে রয়েছে মাত্র ২ জন শিক্ষক। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রাক প্রাথমিকসহ ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানের হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষকেরা। দাপ্তরিক কাজে প্রাথমিক শিক্ষক উপজেলা সদরের গেলে একজনই শিক্ষকই পুরো বিদ্যালয়ে পাঠদান করান।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সাজাইলা মারমা বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। সকালের শিফটে তিনটা ক্লাস । কিন্তু শিক্ষক দুই জন। ক্লাস ওয়ানের পড়ানোর সময় প্রাক-প্রাথমিক বাদ যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে দুইটা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একসাথে পাঠদান করানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ,‘ অনেক সময় বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন বিদ্যালয়ে পাঠদান করানোর মতো কেবল একজন শিক্ষকই থাকে। ’

ভূদং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মারেফাতুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান,‘ আমি চলতি বছরের জুনে এখানে যোগদান করেছি। আমি আর আমার প্রধান শিক্ষক মিলিয়ে আছি দুইজন। সারাদিনই আমাদের পাঠদান করাতে হয়। শিক্ষার্থী তুলনায় শিক্ষক খুবই কম। ১১০ জন শিক্ষার্থীকে দুই জন শিক্ষকের পক্ষে পাঠদান করানো সম্ভব না। পাঁচ জন শিক্ষকের পদ থাকলে কর্মরত রয়েছে মাত্র দুই জন।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আদেশের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে ঝুলে আছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। ফলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জেলার ২৫৮ জন সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ ছাড়াও নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছে না খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে দেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে জেলা সদরের দু’জন নাগরিকের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির যুগ্ম জেলা জজ আদালত নিয়োগ বন্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মোমিন জানান, ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ এবং ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবিধান অনুযায়ী যে কোনো ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিষদ চেয়ারম্যানের এখতিয়ার সুস্পষ্ট করা আছে। আইনমতে, ২০২১ সালের ফ্র্রেরুয়ারিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান ২৫৮টি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি খাগড়াছড়ি জেলার শাখার সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে পদগুলো পূরণ না হলে পাঠদানের যে সংকট রয়েছে তা দূর হবে না। তিনি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকগুলোতে শিক্ষক সংকট তীব্র । কোথাও কোথাও ২ জন মাত্র শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করাতে হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় যাতায়াতে যেমন সমস্যা হয় তেমনি নিরাপত্তার সংকটও রয়েছে। তারপরও প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চিত করতে শিক্ষকেরা ঝুঁকি নিচ্ছে। তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকের প্রায় ৪২৭ পদ খালি রয়েছে। এছাড়া ৫৯৩ বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯৪ টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বর্তমানে ২৫৮জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে শিক্ষক সংকট অনেকটায় দূর হবে।

Exit mobile version