খাগড়াছড়িতে বর্ণিল আয়োজনে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং শুরু

fec-image

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈ-সা-বি-কে ঘিরে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় আনন্দের রং ছড়িয়ে পড়েছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের তিন দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাইং উৎসব। মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসবকে ঘিরে খাগড়াছড়ি জেলা শহর নানা রং-এ রঙ্গিন হয়ে উঠেছে। এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মারমা জনগোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য সাংগ্রাইং র‌্যালী ও জলকেলি বা জলোৎসব। সকালে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ক্যং ফুল পূজার মধ্য দিয়ে সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা হয়। সাংগ্রইং উৎসব উপভোগ করতে খাগড়াছড়ি এসেছে বিপুল সংখ্যক পর্যটক।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়ায় মারমা উন্নয়ন সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত সাংগ্রাইং ও পানি উৎসবের উদ্বোধন করেন, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। তার সাথে সাথে উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়ে চারি দিকে। পরে শহরে বের হয় বণিল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে মনোজ্ঞ ডিসপ্লে ও ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা জলোৎসবে মেতে উঠেন মারমা সম্প্রদায়ের তরুন-তরুনীরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ডিজিএফআইয়ের ডেট কমান্ডার কর্ণেল ইশতিয়াক আহমেদ,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæ চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর দপ্তর খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল সাইফুল ইসলাম সুমন, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর জাহিদ হাসান,জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভ‚ইয়া,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা জলোৎসবে তরুন-তরুনীরা একে অপরের দিকে পানি নিক্ষেপ করে উল্লাস প্রকাশ করে। মার্মা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস এই পানি উৎসবের মধ্য দিয়ে অতীতের সকল দু:খ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে-মুছে যাবে। সে সাথে তরুন-তরুনীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে বেছে নেবে তাদের জীবন সঙ্গীকে। সাংগ্রাইং উৎসব উপভোগ করতে খাগড়াছড়ি এসেছেন অনেক পর্যটকও।
এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে নানা খেলা-ধুলা,পিঠা উৎসব,মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও ওপেন কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) চাকমা সম্প্রদায় পালন করছে মূল বিজু। ফলে চাকমা সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘুরে ঘরে চলছে সাধ্যমত অতিথি আপ্যায়ন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চাকমা সম্প্রদায় পালন করবে পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা। একই সাথে আজ বুধবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা, বিচিকাতাল।ফুল বিজু, মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামে নিজস্ব বৈশিষ্টতায় এ উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়। ত্রিপুরা ভাষায় এ উৎসবকে বৈসু, মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং আর চাকমা ভাষায় বিজু বলা হয়। আগামীকাল জেলা প্রশাসনে উদ্যোগে হবে বর্ষবরণের র‌্যালী। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা এই তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের নাম একত্র করে বৈসাবি শব্দটির উৎপত্তি।

বৈসাবি এক সময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য হলেও এখন সার্বজমিন ও জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মধ্য পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি আরো সুদৃঢ় হোক এ প্রত্যাশা জনপ্রতিনিধিসহ সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন