parbattanews

খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে বিপর্জস্ত জনজীবন : ফেইসবুকে ঝড়

লোডশেডিং
মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

মানুষের জীবন-কর্মের আস্টে-পিষ্ঠে জড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে বিপর্জস্ত বৃহত্তর খাগড়াছড়ির জনজীবন। টানা তিনদিনেরও বেশী সময় ধরে খাগড়াছড়িতে বিদ্যুত না থাকায় মানুষের জীবন চাকা যেন থেমে গেছে। বুধবার সকালের দিকে হটাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকে তিন দিনের বিদ্যুতের স্থায়িত্ব ছিল কয়েক ঘণ্টা।

আট উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এ জেলা জুড়ে টানা তিন দিনের মতো বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন খাগড়াছড়ি ও এর আশে-পাশের ত্রিশ হাজারের মতো গ্রাহক। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে হাসপাতালসমূহের চিকিৎসাসেবা। আর প্রতিবারের মতোই চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার সংবাদকর্মীরা।

টানা তিনদিনেরও বেশী সময় ধরে খাগড়াছড়ি বিদ্যুতবিহীন থাকায় সাংবাদিকসহ অনেকেই ঝড় তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেইবুকে। এনিয়ে খাগড়াছড়ির সাংবাদিক অপু দত্ত তার ফেইসবুক স্টাটাসে লিখেছেন ‘তুমিহীনতা আর বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই.!! প্রযুক্তির এই দিনেও এখনো যে একদিন, দুদিন কিংবা তারও বেশি সময় ধরে আমরা বিদ্যুৎবিহীন থাকি খাগড়াছড়ি তাঁর বড় প্রমাণ..!! মাঝের মধ্যে মনে হয় হারিকেনের জীবনটাই ভালো ছিল’।

দীঘিনালার সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া তার ফেইসবুক স্টাটাসে লিখেছেন ‘গতকাল ( ১ এপ্রিল) দুপুরে হালকা বাতাসের পর থেকে দীঘিনালার বিদ্যুৎ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে খবর পাওয়া গেছে তাকে নাকি আলুটিলায় কে বা কারা বেঁধে রেখেছে। খবর পেয়ে বিদ্যুতের আত্মীয়স্বজন (পিডিবি)র লোকজন তাকে উদ্ধার করতে গেছে। কিন্তু আটকে রাখা ব্যক্তিরা ক্ষমতাধর হওয়ার কারণে পিডিবি এখনও বিদ্যুৎ কে উদ্ধার করতে পারেনি। বিদ্যুতের জন্য সবাই দোয়া করুন। বিদ্যুৎ তুমি আমাদের মাঝে সুস্থ্য অবস্থায় ফিরে এসো।’

মথুরা ত্রিপুরা তার ফেইসবুক স্টাটাসে লিখেছেন ‘খাগড়াছড়ি ভদ্রলোকদের বাচ্চাদের আবাসভূমি! বিদ্যুৎ থাকলো না পানি থাকলো, কারো চুলোয় আগুন জ্বললো নাকি ঘরে আগুন জ্বললো, কারোর মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলো নাকি টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো, ইন্টারনেট সংযোগ থেকে জেলাবাসী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো নাকি সংযুক্ত হয়ে থাকলো, অসুস্থ রোগিরা ডাক্তারি সেবা পেলো নাকি মরে গেলো- এসব ছোটখাটো হীন স্বার্থ নিয়ে অযথা অশান্তি করে লাভ আছে? সুতরাং নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন হে খাগড়াছড়িবাসী। ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি! ও শান্তি! শান্তি! ওহ আবার এমন শান্ত হয়ে ঘুমোবেন না। কাল সকালে আবার জেগে উঠতে হবে না! না হলে খাগড়াছড়িবাসী হওয়ার গর্ব করবেন কিভাবে?’

রামগড়ের সাংবাদিক করিম শাহ তার ফেইসবুক স্টাটাসে লিখেছেন ‘ গতরাতে প্রচুর শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে বিদ্যুৎ সাহেব যে প্রাণ হারিয়েছেন কবে পুনরায় প্রাণ ফিরে পান বলা মুশকিল।’

মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: পরাগ দে বলেন, চিকিৎসকরা খাওয়ার বা গোসলের পানি পেল কিনা তার চেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে টানা বিদ্যুৎ না থাকার কারণে হাসপাতালের শিশু রোগীদের চিকিৎসা মারাত্বকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগিদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

খাগড়ছড়ির ব্যাবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন টানা তিনদিনের বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুত না থাকাটাকে তারা কর্তৃপক্ষের গাফেলতি হিসেবেই দেখছেন।

খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের সূত্র মতে গত কয়েক দফার ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী-ফটিকছড়ি অংশে লাইন বিপর্জস্ত হওয়ার ফলে পুরো খাগড়াছড়ি জেলা ও রাঙ্গামাটির তিনটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের কোন ধরনের গাফেলতি ছিলনা বরং বিদ্যুত সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Exit mobile version