খাগড়াছড়িতে মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব উৎসব রাজপূণ্যাহ কাল

D 01 (06-02-14)

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মং সার্কেলে ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব আদায় উৎসব রাজ পূণ্যাহ আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। তিন দিন ব্যাপী কর্মসুচী অষ্টম রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী সভাপতিত্বে রাজ পূণ্যাহ শনিবার সকালে মং সার্কেল রাজবাড়ী প্রাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে-খাগড়াছড়ি সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা, জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ করিমসহ উর্দ্ধতন সরকারী কর্মকর্তা রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের প্রজারা উপস্থিত থাকবেন ।  

এ উৎসবকে ঘিরে রাজবাড়ীতে এখন সাজ সাজ রব। রাজ রাজবাড়ীতে বসছে পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ সকল সম্প্রদায়ে মিলন মেলা। এ উৎসবকে সামনে রেখে মারমা,চাকমা,ত্রিপুরা এবং ব্ঙাগালী,মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
 রাজবাড়ী সুত্রে জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খাগড়াছড়িতে অনু্ষ্িঠত হতে যাচ্ছে মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী খাজনা(রাজস্ব) আদায়ী উৎসব। অনুষ্ঠিতব্য রাজ পুন্যাহ্ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদরে মহালছড়ার রাজবাড়ীতে শেষের পথে সাজ-সজ্জার কাজ। ইতি মধ্যে শেষ হয়েছে রাজা সবার মঞ্চসহ মেহমানদের বসার প্যান্ডেলের কাজ। রাজ পুণ্যার দিন রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীকে বরণ,জুম খাজনা আদায় ও নজরানা প্রদান করা হবে।

রেওয়াজ অনুযায়ী প্রত্যেক মৌজা প্রধান (হেডম্যান) ৫’শত টাকা এবং প্রত্যেক পাড়া প্রধান (কার্ব্বারী) ৩’শত টাকা করে রাজ দরবারে রাজাকে রাজস্ব বা নজরানা প্রদান করবে। রাজ পুন্যাহ্ হচ্ছে মূলত পাহাড়ে পার্বত্যবাসীদের খাজনা (রাজস্ব) আদায়ী উৎসব। এ দিন গ্রাম প্রধান হেডম্যান-কারবারীসহ প্রজারা রীতি অনুযায়ী তাদের রাজার সম্মানার্থে খাজনা দিয়ে থাকেন।
এদিনে রাজার রাজ পোশাক পরে এবং গার্ড অব অর্নার প্রদানে মাধ্যমে রাজবাড়ী থেকে সৈন্য-সেনারা রাজাকে মঞ্চে আসেন। মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, রীতি নীতি অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হতে রাজ পুন্যাহ উৎসব। রাজ পুণ্যাহ’র সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু উৎসব শুরুর প্রহর বাকী। এতে ১২১ জন মৌজা প্রধান (হেডম্যান) ও ১২শ জন গ্রাম্য কার্ব্বারী এসবার আনুষ্ঠানিক ভাবে কর পরিশোধ করবেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আইন সমূহ,প্রথার সংজ্ঞা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের প্রথার গুরুত্ব, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন,করার বিষয়ে সকল হেডম্যান-কারবারীদের আরো সচেতন করে তুলতে কাজ করা হবে বলে জানা যায়।
    

জানা যায়,সর্বশেষ ২০০৬ সালে রাজ পিতা প্রয়াত পাইহ্লাপ্রু চৌধুরী সময়ে প্রথম রাজ পূণ্যাহ শুরু হয়। তাছাড়া ১৯৬৯ সালে একবার ধারাবাহিক সর্বশেষ রাজ পূণ্যাহ হয়েছিল। তার আগে তৎকালীন ১৮৮৩ সালে কংজধবইং রাজার আমলে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকৃতি স্বরুপ তলোয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রথম সাধারন প্রজাদের কাছ থেকে জুম চাষের একরের প্রতি ৬ টাকা খাজনা  আদায় করে  রাজ পূণ্যাহ উৎসব পালন করে আসছিল। কি›তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গুরুত্বপুর্ন কাগজ পত্র খোঁয়া যাওয়ায় এটি কততম রাজ পূণ্যাহ তা বলা যাচ্ছে না।

এ অনুষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার তিন সার্কেলের রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেল, বান্দরবান বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়ি মং সার্কেল অধিভূক্ত। খাগড়াছড়ি জেলার ৮ উপজেলা সদর, মাটিরাংগা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি, পানছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা অন্তর্ভূক্ত তার মধ্যে  লক্ষীছড়ি ও দীঘিনালা ২টি উপজেলার কিছু অংশ রাংগামাটি পার্বত্য জেলা চাকমা সার্কেলের আওতাধীন।  
     

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন