parbattanews

খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া আতঙ্ক বাড়ছে : ভয়াবহ নয় দাবী স্বাস্থ্য বিভাগের

ম্যালেরিয়া

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

খাগড়াছড়িতে অব্যাহত ভাবে বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও তাদের মৃত্যুর হার। ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৯৬ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যু হলেও চলতি বছরের ৬ মাসেই মারা গেছেন ৯ জন। আর মাত্র গত দুই মাসে (জুন ও জুলাই) খাগড়াছড়ি জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ২‘শ ৯৪ জন। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিলেও ম্যালেরিয়াকে ভয়াবহ বলতে রাজী নয় খাগড়াছড়ির স্বাস্থ্য বিভাগ।

এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ও স্বাস্থ্য বিভাগের গত সাড়ে ছয় বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খাগড়াছড়িতে ২০০৭ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৭‘শ ৬২ জন। সে বছর মারা গেছে ১‘শ ১ জন। ২০০৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৬‘শ ৭৩ জনে। মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসে দাড়ায় ৫৩ জনে। ২০০৯ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৮‘শ ১১ জন। আবার ঐ বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২ জন। ২০১০ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৩‘শ ৪৮ জন। সে বছর মারা যায় ১৩ জন। ২০১১ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৯‘শ ৬৬ জন। মারা যায় ১৫ জন। ২০১২ সালে রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯‘শ ৯৭ জনে। আর সে বছর মারা গেছে মাত্র ৬ জন ম্যালেয়িা রোগী। ২০১৩ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৪ হাজার ৯৬ জন। সে বছর একজন বেড়ে মারা যায় ৭ জন।

আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৪‘শ ৮০ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হলেও শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১‘শ ৭৪ জন। আর এ সময়ে মারা গেছে ৯ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী।

খাগড়াছড়ি ব্র্যাকের সিনিয়র ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো: ফজলুল হক পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে ঠিক তবে তা নিয়ন্ত্রণের রয়েছে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৪‘শ ৮০ জন আক্রান্ত হলেও জুন মাসে হঠাৎ করে পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়ে ২ হাজার ১‘শ ৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর জুলাই মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১‘শ ২০ জন।’ তবে আগস্ট মাসে এই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি। চলতি বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র মানিকছড়িতে চার জন মারা গেছে বলে জানান তিনি।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজিদা শরমিন পার্বত্যনিউজকে জানান, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মানিকছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। পল্লী চিকিৎসকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি ও জনমনে আতঙ্কও কমেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নারায়ণ চন্দ্র দাশ পার্বত্যনিউজকে জানান, প্রতি বছর জুন এবং জুলাই মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। যদিও এ বছর এই সংখ্যাটি একটু বেশি। তবে পাশের দুই জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের মত অবস্থা এখনও এখানে তৈরি হয়নি।

তিনি বলেন, ‘ওষুধে চুবানো মশারির কার্য ক্ষমতা হারানো, ঘুমানোর সময় মশারি না টানানো এবং মশার প্রজনন সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনেই এমনটি হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেও জেলার মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি, রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি এই পাঁচ উপজেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব উপজেলায় মেডিকেল অফিসারদের নেতৃত্বে বিশেষ মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Exit mobile version