খাগড়াছড়ির আমবাগানগুলোতে মুকুলের সাজ সাজ রব: বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

(2) 23-02-14
আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ শিমুলের বনে লেগেছে আগুনরঙা ফুলের মেলা। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো বাংলার বুক মাতাল করতে বাসন্তরানী। রঙিন বনফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে। তেমনি নতুন সাজে যেন জেগে উঠেছে মাটিরাঙ্গার আম্রপালির বাগানগুলো।  আম্রমুকুলের সাজ সাজ রব আর ঘ্রানে উপজেলার সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনি বার্তা।শোভা ছড়াচ্ছে আম্রমুকুল তার নিজস্ব মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে খাগড়াছড়ির বাগানগুলো । প্রায় ৯০ শতাংশ গাছেই মুকুল এসেছে । বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আমচাষীরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ,মাটিরাঙ্গা  উপজেলায়  আমের বাম্পার ফলন হবে । আমচাষী, বাগান মালিকরা বাগানে পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ।

অবশ্য গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই  গাছের পরিচর্চা করে আসছেন চাষীরা । যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় । মুকুল থেকে  ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছিরা মধু আহরনে ব্যস্ত, মৌ মৌ সুবাসে মুখরিত এখন আম্রপলির বাগন। বাগানের সারিবদ্ধ গাছে ভরপুর আমের মুকুল যেন শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায় ।

পার্বত্যাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আম্রপলি, ফজলি, মালদাসহ অন্যান্য জাতের আম চাষের উপযুক্ত হওয়ায় চাষীরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে চারা সংগ্রহ করে  আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন  করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করে যাচ্ছে । সুফল ও পেয়েছেন অনেকেই ।

কথা হয় আম চাষে সফল কৃষক জেলার মাটিরাঙ্গার আদর্শ গ্রামের কৃষক ফরিদ ডিলার, বুদং পাড়ার মোহাম্মদ উল্লাহ ,মুসলিম পাড়ার আঃ খালেক , গুইমারা থানার বড়পিলাক গ্রামের  আসাদ গাজী, ডাঃ শাহ আলম, মোঃ হাসুমিয়া, শাহজাহান গাজী, মেম্বার সৈয়দ হোসেন ওয়াছকুরুনী ও সিদ্দিক মিয়া, আমির হোসেনসহ অনেকের সাথে । তারা জানান শীতের জড়তা কাটিয়ে বসন্তের আগমনে ধীরে ধীরে উষ্ণ হাওয়া বহাতে শুরু করায় ও ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্খিত ফলনের আশা করছে কৃষকরা ।

মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও গুইমারা এলাকার আম চাষীরা, আমচাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিতি সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুইয়ার কথা বার বার স্মরণ করেন । চাষীরা জানান, গত বিএনপি সরকারের আমলে ওয়াদুদ ভুইয়া  উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বিনামুল্যে চারা, পরিচর্চার খরচ, শ্রমের মুজুরীসহ প্রতিটি বাগানে একটি করে ঘর তৈরী করে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের চাষীদের কে আমসহ মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পুরো উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় শতশত একর মিশ্র ফল বাগান সৃজন করে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।

এছাড়া বাগানে সেচ দেওয়ার জন্য স্যালো মেশিন দিয়ে মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষকদের। এসব বাগানের সুবিধা ভোগীদের সুফল দেখে চাষীরা আম চাষে উৎসাহিত হয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন বাগান সৃজন করছেন অনেকে। ধীরে ধীরে পার্বত্যাঞ্চলে সম্প্রসারিত হচ্ছে আমের বাগান। পার্বত্যাঞ্চলে উৎপাদিত আম মানসম্মত হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে অনেক । মাটিরাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকুল  থাকায় আমের উৎপাদন গত বছরের চাইতে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করা যায় ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন