parbattanews

খাগড়াছড়ির আলুটিলা সুরঙ্গ, রিছাং ঝর্না আর দেবতা পুকুর পর্যটকদের পদভারে মুখর

07.10.2014_Khagrachari EID Toure NEWS Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া প্রকৃতির হাতছানি। পাহাড় আর অরণ্য বেষ্টিত সর্পিল পিচঢালা সড়ক। পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা জলপ্রপাত উপভোগ করতে খাগড়াছড়ির সবক’টি পর্যটন স্পটে ভিড় করছেন নানা বয়সী পর্যটকরা। শিশু, নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সব বয়সীরা মেতে উঠেছেন ঈদ আনন্দে। যেখানে গেছি সেখানে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের বাঁধভাঙা জোয়ার।

প্রাকৃতিক এসব গুহা ও ঝর্ণার টানে প্রতি বছর ঈদে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন পাহাড়ীকণ্যা খাগড়াছড়িতে। এবারও তার ব্যাতক্রম ঘটেনি। বরাবরের মতো এবারও স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের পদচারনায় জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো মূখরিত।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রহস্যময় সুরঙ্গ, জেলা পরিষদ পার্ক মাটিরাঙ্গার রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ভগবান টিলা, দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণা, থাংঝাং ঝর্ণা, গোবিন্দ মানিক্যের খনন করা দীঘি, দীঘিনালা বনবিহার, মানিকছড়ির রাজবাড়ি, রামগড়ের রামগড় লেক, চা বাগান পানছড়ির রাবার ডেম ও অরন্যকুটির সবক’টি স্পটেই ঈদের দিন থেকেই উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকালেও বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের এ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে খাগড়াছড়িতে ছুটে আসা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষন আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ এবং জেলার বিভিন্ন ঝরনা। শহরের খুব কাছাকাছি আলুটিলার ‘রহস্যময় সুরঙ্গ’। টিকেট কেটে হাতে মশাল হাতে কয়েক‘শ সিড়ির পেরিয়েই দেখা মিলে কাঙ্খিত সুরঙ্গটির। গা ছমছম করা আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ আর রিছাং ঝর্ণা এই সময়ের পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের চারন ভুমি এমনটাই বললেন চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেহরিন। তার মতে পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা ঝরনা ধারার সাথে মিতালী আর ২৮২ ফুটের সুরঙ্গ অতিক্রম না করলে জীবনটাকেই উপভোগ করা হতোনা। সুড়ঙ্গ’র জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সুড়ঙ্গকে ঘিরে দেশব্যাপী আলুটিলা পরিচিতি পেয়েছে ভিন্ন ভাবে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি খাগড়াছড়ির সর্বস্তরের মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এ সব স্পটে আনন্দে উদযাপনে মেতেছেন। কেউই যেন অপার এ আনন্দকে হাতছাড়া করতে চাননি। প্রতিটি স্পটেই বাড়তি উৎসবে মেতেছিলেন নব দম্পতি, কপোত-কপোতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা।

ছোট্ট ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীরা লেকের ঝলমল পানিতে নৌকায় চড়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন। মাঝ বয়সীরা প্রকৃতির ছায়াতলে আড্ডায় মেতেছেন। নব দম্পতি, কপোত-কপোতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা ঝড়নাধারার সাথে মিতালী করতেও ভুলেনি। দুর পাহাড়ে ছুটে চলার ক্লান্তি যেন মিশে গিয়েছিল পাহাড়ের আনন্দ জোয়ারে। ছোটদের ছুটোছুটি, বড়দের আড্ডা আর তরুন-তরুনীদের ঝড়নাধারার সাথে আলিঙ্গনের ফলে পর্যটন স্পটগুলো যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

পাশের জেলা ফেনী থেকে মাটিরাঙ্গার রিছাং ঝর্ণায় বেড়াতে আসা ইভান‘র মতে আমি অনেক পর্যটন স্পট ঘুরেছি। কিন্তু রিছাং ঝর্ণা আমার সব দেখাকে মিথ্যে করে দিয়েছে। আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ তার কাছে নতুন এক অভিজ্ঞতার নাম।

সমূদ্র পিষ্ট থেকে প্রায় ৭‘শ ফুট উপরে রহস্যময় ‘দেবতা’ পুকুরটি পর্যটকদের কাছে বিধাতার অবাক করা বিস্ময়। খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের নুনছড়ি হয়ে যেতে হয় সেখানে। দেবতা পুকুর নামে পরিচিত এ বিস্ময় দেখতে অসংখ্য পর্যটক বেড়াতে যান ওই পুকুরে। ঈদ বা কোন উপলক্ষ হলেতো কথাই নেই। সমূদ্র পিষ্ট থেকে প্রায় ৭‘শ ফুট উপরে এ পুকুরে শুস্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি দেখে বহু পর্যটক অবাক হয়ে যান। দেবতা পুকুরটি ইতিমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটে পরিনত হয়েছে।

এদিকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে উপভোগ করেছেন খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রহস্যময় সুরঙ্গ, রিছাং ঝর্ণা, মাটিরাঙ্গার শতবর্ষী বটগাছসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো। সেনা পরিবারের সদস্যদের পদচারনায় এদিন বিকালে অন্য এক রূপ ধারন করে পর্যটনস্পগুলো ।

সবমিলিয়ে ঈদের ছুটিতে স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত ছিল খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো। কোথাও যেন তিলধারণের ঠাঁই ছিলনা। পাহাড়ী কন্যা খাগড়াছড়ির আকাশ-পাহাড়ের মিতালিও উপভোগ করছেন আগত পর্যটকরা।

 

Exit mobile version