খাগড়াছড়ির ছয় উপজেলায় দলীয় সমর্থন পেতে মাঠে নেমেছে প্রার্থীরা

Untitled-1

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেষ কাটতে না কাটতেই শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর নড়েচড়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির ছয় উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কানাঘুষা চলছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কার্যালয়েও। চায়ের দোকানগুলোতে ঝড় উঠেছে উপজেলা নির্বাচনকে সামন রেখে। শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দোষ-গুণ বিচারের কার্যক্রমও। কার জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে, কার দ্বারা কতটুকু উন্নয়ন হবে, কে ভোটারদের যথাযথ মুল্যায়ন করবে এসবও আলোচনার বাইরে নেই।

প্রথম দফায় ঘোষিত ১০২ উপজেলার মধ্যে পার্বত্য খাগড়াছড়ির আট উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলায় আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী দীঘিনালা ও লক্ষীছড়ি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে না। তফসীল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের সমর্থন ভাগিয়ে নিতে তৎপর রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিগত ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়ে এবার এখানে প্রার্থী সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ি-বাঙ্গালীলর সমীকরণে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সাথে অন্য সব নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ পাল্লা দিতে চায় স্থানীয় দুই আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি‘র দুটি অংশ।

সমর্থনযোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতও নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে তাদের দলীয় সুত্রে জানা গেছে। ছয় উপজেলাতে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে নানামুখি কৌশল গ্রহণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়বেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শানে আলম। গেল নির্বাচনে তিনি কোনো দলের সমর্থন না পেলেও এবার তাকে সরকারী দল সমর্থন দেবে এটা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়াও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, সাংবাদিক নুরুল আজম, ক্যাজরী মারমা এবং সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো: তাজুল ইসলাম বাদল, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অনিমেষ দেওয়ান নন্দিত বিএনপির দলীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অপরদিকে আঞ্চলিক দলের সমর্থনে প্রতিদ্বন্ধিতায় নামবেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সমাজকর্মী ধীমান খীসা, কিরণ মারমা এবং দেবদন্ত ত্রিপুরার নাম আলোচিত হচ্ছে জোড়েশোড়ে।

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ জব্বারের সাথে নিজ দলের ম্রাগ্য মারমা, যোগ্যাছোলা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ জয়নাল, সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান ফারুকের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ করিম, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো: আব্দুল কাদের ও বিএনপি নেতা এসএম রবিউল ফারুক।

জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. শামসুল হক‘র সাথে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তাইন্দং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম। বিএনপির সমর্থন পেতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম তাজু। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আভির্ভুত হয়েছেন তবলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আবুল কাশেম ভূইয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতের সমর্থনে মাঠে রয়েছেন আলকাছ আল মামুন।

পানছড়ি উপজেলা পরিষদে ইউপিডিএফ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা এবারও প্রার্থী হচ্ছেন ইউপিডিএফের সমর্থন নিয়ে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: বাহার মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি জিমি চাকমা, জনসংহতি এমএন লারমা অংশের কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল বিকাশ চাকমা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বেলাল হোসেনের প্রার্থীতার কথা নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট দলের নেতারা।

রামগড়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে বর্তমান চেয়ারম্যান মো: বেলায়েত হোসেন ভূইয়া‘র পাশাপাশি আওয়ামীলীগ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তফা হোসেন ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে রামগড় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: শহীদুল ইসলাম ভূইয়া ফরহাদ ‘র নাম আলোচিত হচ্ছে ভোটার মহলে। এখানে প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মংপ্রু চৌধুরী, বিএনপির (সমীরণ গ্রুপ) থেকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন রিপন ভোটের মাঠে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলার মহালছড়ি উপজেলা নির্বঅচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা গ্রুপ) সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার পাশাপাশি উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের চারবারের চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চৌধুরীর প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। প্রার্থী হিসেবে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান খীসা‘র নাম আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামীলীগ থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ‘র সাধারণ সম্পাদক রতন শীল এবং বিএনপি থেকে মহালছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. হোসেন বাবু‘র নাম আলোচিত হচ্ছে প্রার্থী হিসেবে।  

নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এবং সে অনুযায়ী ৬ উপজেলাতেই প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে চলতে হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। যারা প্রার্থী হবে তাদের অনেকে এলাকায় যেতে পারছেন না। নিজেদেরই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তারপরও আমরাতো কাউকে খালি মাঠ ছেড়ে দিতে পারিনা।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম বলেন, উপজেলা পর্যায়ের নেতারা নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাদের অনেকেই নানাভাবে নিজেদের পক্ষে দলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা-তদবির করছেন। তবে দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শের ভিত্তিতেই প্রার্থী চুড়ান্ত করা হবে। তিনি প্রতিটি উপজেলায় দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের আশা প্রকাশ করেন।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি‘র (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা জানান, আমরা ছয় উপজেলাতেই প্রার্থী দেব। কোনো কোনো উপজেলায় সমমনা দলের সাথে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে তোলারও আভাস দেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন